গ্রাহকের কিস্তির টাকা আত্মসাতের পর এবার কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে অর্থ তছরুপ করেছে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এরই মধ্যে বিমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিশেষ পরিদর্শন দল। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে কোম্পানিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আইডিআরএ ।
বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন স্থায়ী আমানত হিসাবে রাখতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এই আমানত তফসিলি ব্যাংকে বাধ্যতামূলক দায়মুক্তভাবে রাখতে হয়। কিন্তু আইডিআরএর পরিদর্শনে উঠে আসে, স্বদেশ ইসলামী লাইফ কর্তৃপক্ষ বিমা কোম্পানি আইন ভঙ্গ করে স্থায়ী মূলধনের অর্থ বন্ধক রেখে এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আইডিআরএর কাছে কৌশলে গোপনও করেছে তারা। কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনেও ঋণের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এমনকি আইডিআরএর পরিদর্শন দলের কাছেও এই ঋণের বিষয়ে কোনো তথ্য উপস্থাপন করেনি বিমা কোম্পানিটি। এটি রীতিমতো প্রতারণা ও বিমা কোম্পানি আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
আইডিআরএর তদন্ত কর্মকর্তারা স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নেওয়া ঋণের পুরো টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে তছরুপ করার প্রমাণ পেয়েছেন। এ জন্য কোম্পানিটির ব্যবসা নিবন্ধন বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সিইও মো. জামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোম্পানির মূলধনের টাকা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা একটি বড় অপরাধ। এটি কোম্পানির ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। এ নিয়ে আইডিআরএর চিঠি পাওয়ার পরে তা পরিচালনা পর্ষদে পাঠানো হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। তারপর আইডিআরএ সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিমা কোম্পানি আইন, ২০১০ এর ১০ ধারা (১) অনুযায়ী, কোনো বিমা কোম্পানি পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ বা ব্যবসার উন্নয়নের পরিপন্থী কাজ করলে বিমা কোম্পানিটির নিবন্ধন বাতিল করতে পারে আইডিআরএ। পাশাপাশি বিমা আইন বা প্রবিধানের কোনো বিধান লঙ্ঘন হলেও এবং বিমা কোম্পানি ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড বা অনিয়মের প্রমাণ পেলে নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। তবে আইন অনুযায়ী, কোনো বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ৩০ দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত। এ অনিয়মের আগেও অন্যান্য অপকর্ম করেছে কোম্পানিটি। অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবার আইনানুযায়ী ৩০ দিনের সময় দিয়ে ৪ ডিসেম্বর কোম্পানি স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ তথ্য গোপন রাখার ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে কোম্পানির নিবন্ধ বাতিল করা হবে।’