সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপ খনন করে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল (১৫৯ লিটার) তেলের প্রবাহ পাওয়া গেছে। এই কূপ থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল হারে তেল পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, মজুত থাকা এ গ্যাস ও তেলের আর্থিক মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তেল মজুতের সম্পূর্ণ তথ্য জানতে আরও চার থেকে পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া ওই কূপের তিনটি স্তরে নতুন গ্যাসের সন্ধানও পাওয়া গেছে।
রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। উল্লেখ্য, সিলেট তামাবিল-জাফলং মহাসড়কের পাশে গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাঘের সড়ক এলাকায় অবস্থিত এই অনুসন্ধান কূপে দুই মাস আগে খননকাজ শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড কোম্পানি। ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূপটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এ কূপে জ্বালানির মোট ৪টি স্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রথম স্তরে প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ, আগে মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০ বছর এখান থেকে সুফল পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে সিলেট খনি থেকে উত্তোলিত তেল পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। তেলের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। আর গ্যাসের বিষয়টি পরীক্ষার জন্য সিলেট গ্যাস ফিল্ডে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, তেলের স্তরটি আলাদা পাওয়া গেছে। আগে গ্যাসের সঙ্গে তেল পাওয়া যেত। যেগুলোকে কনডেনসেট হিসাবে ধরা হতো। এবার পুরোপুরি তেল পাওয়া গেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম স্তরের ১,৪০০ মিটার গভীরতায় তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যদিও প্রথম স্তরে কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি। তবে পুরো চিত্র বোঝার জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে খনিজ তেলের আবিষ্কার এই প্রথম নয়। আশির দশকের শেষের দিকে হরিপুর ফিল্ডে প্রথম তেল আবিষ্কৃত হয়।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, সিলেট-১০নং কূপে ২ হাজার ৫৭৬ মিটার গভীরতায় খনন সম্পন্ন করা হয়। কূপে ৪টি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। নিচের স্তরটির ২,৫৪০-২,৫৫০ মিটারে পরীক্ষা করে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া গেছে, যার ফ্লোয়িং প্রেশার ৩,২৫০ পিএসআই। আর মজুতের পরিমাণ ৪৩-১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ২,৪৬০-২,৪৭৫ মিটারে আরও একটি ভালো গ্যাস স্তর পাওয়া গেছে, এখানে টেস্ট করলে ২৫-৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২,২৯০-২,৩১০ মিটারেও গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া ১,৩৯৭-১,৪৪৫ মিটার গভীরতায় আরও একটি জোন পাওয়া যায়, যেখানে ৮ ডিসেম্বর পরীক্ষা করে তেলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে যার এপিআই গ্রাভিটি ২৯.৭ ডিগ্রি। এখান থেকে সেলফ প্রেশারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল তেলের প্রবাহ পাওয়া যায়। পরীক্ষা সম্পন্ন হলে তেলের মজুতের পরিমাণ জানা যাবে।
নসরুল হামিদ জানান, ২,৫৪০ ও ২,৪৬০ মিটার গভীরতায় একযোগে উৎপাদন করা হলে প্রায় ৮-১০ বছর এটি সাসটেইন (টেকসই হবে) করবে এবং এর গড় ভারিত মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যদি ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে উৎপাদন করা হয়, তাহলে এটি ১৫ বছরের অধিক সময় টেকসই হবে। এর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। এটি পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল। ওই সময় এপিআই গ্র্যাভিটি ছিল ২৭ ডিগ্রি। এবারের এপিআই গ্র্যাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি পাওয়া গেছে। এটি আরও বাড়তে পারে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত থাকবে। মাল্টিক্লাইন সার্ভের প্রাথমিক ডেটা পাওয়া গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিডিং রাউন্ডে যাবে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি কূপে মোট ১০৫ এমএমসিএফডি গ্যাস পাওয়া গেছে। ৪৬টি কূপে সন্ধান করা হবে, যা থেকে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে।