রাজশাহী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী নিজের ভোট দিতে পারবেন না। এই আসনের আরও দুই প্রার্থী নিজের ভোট দিতে পারবেন না।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তানোর বাসিন্দা হলেও তিনি সেখানকার ভোটার নন। তার আদিবাড়ী তানোর উপজেলায় কলমা ইউনিয়নের চৌরখোর। তিনি এখন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার।
সবশেষ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজশাহী বিবি হিন্দু অ্যাকাডেমি স্কুলে গিয়ে ভোট দেন। এই স্কুলটি নগরীর সাগরপাড়ায় অবস্থিত।
জানা গেছে, সংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০১ সাল থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভোটার। তিনি এখান থেকে প্রতিবার ভোট দেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ওমর ফারুক চৌধুরী তারা তিনবারের এমপি। এর ২০০১ সালে তিনি বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা আমিনুল হকের কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে আমিনুল হক কে হারিয়ে তিনি জয় লাভ করেন। ২০১৪ সালে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকাই তিনি আবারও জয়লাভ করেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমিনুল হককে পরাজিত করে আবারো জয়ী হন।
তবে এইবার এ আসনে এ সংসদ সদস্যকে ছাড় দিচ্ছেন না দলীয় নেতা কর্মীরা। দলীয় অধিকাংশ নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানীর পক্ষে কাজ করছেন। এছাড়াও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ঢাকায় সিনেমার বিখ্যাত নায়িকা শারমিন আক্তার নিপা (মাহিয়া মাহি) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপ কমিটির সদস্য আয়েশা আক্তার ডালিয়া।
জানা গেছে, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী ভালো অবস্থানে আছেন। তার পক্ষে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, চারটি পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলররা সাথে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী চলাফেরা করেন রাজাদের মত। নিয়ে আসনে নিজেকে রাজা মনে করেন। তার কাছে দলের নেতকর্মীদের একবারে তুচ্ছ মনে করেন। তাই এবার অনেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফারুক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষক বলেন, ‘ফারুক চৌধুরী এই এলাকায় জমিদারদের মতো থাকেন। তিনি সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝেন না। সরকারি সব সহায়তা তিনি নিজের নামে প্রচার করেন। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও আছে। এছাড়াও তার আশেপাশে থাকা মানুষগুলোও অনিয়ম করে সম্পদশালী হয়ে উঠেছে।’
গোদাগাড়ী এলাকার বিজয়নগর গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘তিনি তিন বারের এমপি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে আমাদের এলাকায় একবারও দেখিনি। তিনি সবসময় তানোরে থাকেন। আমাদের কাছে আসেননি। আমাদের সমস্যাও শোনেননি। আমাদের গ্রামে আসেন তার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন সোহেল। কিন্তু ওমর ফারুককে কোনোদিন আমরা পাইনি।’
তানোর উপজেলার কাশিমবাজার এলাকার ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাজারে আমি দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করছি। এমপি ফারুক চৌধুরী কোনোদিন এই বাজারে নামেননি। তিনি এক কাপও চাও খেয়ে যাননি। ভোটের প্রচারের ১০ দিন হয়ে গেল তাকে এখনও দেখিনি। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা এসেছেন এলাকায়। শুধু ফারুক চৌধুরীর কর্মীরা প্রচার করে গেছেন। একজন এমপি হিসেবে অবশ্যই তার এলাকার জনগণের খোঁজখবর রাখা দরকার। কিন্তু তিনি তা করেননি।’
এর আগে, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে সমালোচিত হন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে রেষারেষি, নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে বিভিন্ন পদে বসানো, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজের আত্মীয় ও অনুসারীদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সখ্যতার খবরও মানুষের মুখে মুখে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ এর এক প্রতিবেদনেও মাদকসংশ্লিষ্টায় তার নাম এসেছে।
দুই উপজেলার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন, হয়তো এবার এই আসনে পরিবর্তন হতে পারে। ভোটাররাও আর চাচ্ছেন না এমপিকে। দলীয় মনোনয়ন পেলেও অনেকে সরে গেছেন তার কাছ থেকে। দীর্ঘ সময় ওমর ফারুক চৌধুরী যেমন জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, তেমনি নিজস্ব কিছু কর্মী বাহিনীও তৈরি করেছেন। তাছাড়া তিনি তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে দুই উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন। নৌকায় ভোট দিলে এ ভাতা দ্বিগুণ হবে- এমন কথা তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে ঢুকিয়েছেন। দুই উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সব সময়ই নিজের পক্ষে কাজে লাগান তিনি।
তবে এই আসনে ভালো অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীরা বলছেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে একচেটিয়া ভোট পাবে গোলাম রাব্বানী। ফারুক চৌধুরীর হতে পারে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী-১ জাতীয় সংসদের ৫২তম আসন। এ আসনের তানোর উপজেলায় পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ১৪৩ জন, আর নারী ভোটার ৯০ হাজার ৮৭০ জন। গোদাগাড়ী উপজেলায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৭০ জন।