ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর দেশের নানা স্থানে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের হেনস্তা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এই অস্থিরতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বৈরিতা, যারা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পড়াশোনা করছেন। সামাজিক মাধ্যমেও কাশ্মীরিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ছড়ানো হচ্ছে।
কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের সর্বভারতীয় একটি সংগঠন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে নিজ ঘরে আটকে রয়েছেন। একইসঙ্গে মুসলমান-বিরোধী ঘৃণাত্মক প্রচারও বেড়ে চলেছে সামাজিক ও গণমাধ্যমে। বিশ্লেষকদের মতে, পহেলগাম হামলার পর কেবল কাশ্মীরি ও মুসলমানদের বিরুদ্ধেই নয়, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারার মানুষদের প্রতিও প্রবল মৌখিক আক্রমণ শুরু হয়েছে।
ভারত সরকার পহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নানা জায়গায় পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা চত্বরে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ২৬টি পাকিস্তানি পতাকা পোড়ান। ত্রিপুরার আগরতলাতেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পাকিস্তানের পতাকা পোড়ায়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তায় মানুষের চলাচলের পথে পাকিস্তানের পতাকা লাগানো হচ্ছে, যাতে মানুষ পতাকার উপর দিয়ে হাটে।
বিভিন্ন স্থানে কাশ্মীরি ছাত্রদের হুমকি ও হামলার অভিযোগ
উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে একটি হিন্দু সংগঠনের নেতা দাবি করেন, প্রকাশ্যে কাশ্মীরিদের শহর ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। কাশ্মীরি ছাত্রদের প্রতি হুমকি ছড়ানো এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েমি জানিয়েছেন, পুলিশ কিছু হুমকিদাতাকে আটক করেছে, তবে হেনস্তার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের হেনস্তা ও হুমকির খবর আসছে। দেরাদুন, চণ্ডীগড় ও প্রয়াগরাজসহ নানা স্থানে মারধর, হুমকি এবং হয়রানির অন্তত আটটি বড় ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কথা প্রকাশ না করতে প্রশাসনিক চাপ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নাসির খুয়েমি জানিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক আলোচনায় না জড়াতে এবং বেশি বাইরে বের না হতে।
পহেলগাম হামলার পর কাশ্মীরে প্রতিবাদ
পহেলগামে হামলায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে একজন কাশ্মীরি মুসলিমও ছিলেন, যিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় ভ্রমণ করাতেন। তিনি হামলাকারীদের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিতে গিয়ে প্রাণ হারান।
হামলার পর কাশ্মীরের ট্যাক্সিচালকরা মোমবাতি মিছিল করেন এবং পরদিন পুরো কাশ্মীরে হরতাল পালিত হয়। স্থানীয় পর্যটন শিল্পও হামলার ঘটনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।