১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:৪৫:১২ অপরাহ্ন
ভোটের কৌশলে সফল শেখ হাসিনা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০১-২০২৪
ভোটের কৌশলে সফল শেখ হাসিনা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের কৌশলে সফল হলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বহুমাত্রিক স্মার্ট নেতৃত্ব দেখল বিশ্ব। ম্যাজিক নেতৃত্বের কারণে টানা চতুর্থবারসহ মোট পঞ্চমবারের মতো নিজ দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এলেন তিনি। নিজেও টানা চতুর্থবার ও মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। যদিও বিএনপি-জামায়াতের ভোট বর্জন, একের পর এক নাশকতা, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে এবার নির্বাচনটি করা বেশ কঠিন ছিল আওয়ামী লীগের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি সফল নির্বাচন করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি সফল নির্বাচন উপহার দেয়ার পেছনে শেখ হাসিনার অন্যতম কৌশল ছিল দলীয় প্রার্থীর বাইরে নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা উন্মুক্ত করা। গত ২৬ নভেম্বর বিকালে ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এর আগে সকালে গণভবনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে মনোনয়নবঞ্চিত দলের নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ উন্মুক্ত রাখার ঘোষণা দেন তিনি। তার এই ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের অনেক বড় নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ফলে অনেক এলাকায় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট শরিকদের হারতেও হয়েছে। এমনকি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া কয়েকটি আসনেও লাঙ্গলকে হারতে হয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

নৌকার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, ১৪ দলীয় জোট শরিক ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিলেও নির্বাচনটি মূলত প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে। ফলে তৃণমূলে বিরাজ করেছে ভোটের আমেজ। ভোটাররাও বেশ উচ্ছ¡সিত মনোভাব নিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। বেশ কয়েকটি আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীদের হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদেরও কেউ কেউ রয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ভোটের হার প্রায় ৪০ ভাগ। ভোটের এই ফলাফলে সন্তুষ্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচন নিয়ে


ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। গতকাল রবিবার ভোটগ্রহণ শেষে বিকাল ৫টায় ঢাকার একটি হোটেলে ভোটের পর্যবেক্ষণ প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে জানান তারা। ভোটের পরিবেশেরও প্রশংসা করেন পর্যবেক্ষকরা।

সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ফিলিস্তিনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাশিম কুহাইল বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ভোট শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের পরিবেশও খুব ভালো ছিল। নাগরিকদের ভোট দেয়ার প্রক্রিয়াও খুব সহজ ছিল। এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিবিদ জিম ব্যাটস বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচালনা করেছে। কানাডার এমপি চন্দ্রকান্থ আরিয়া বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ভোটে রেকর্ডসংখ্যক নারী ভোটার উপস্থিত ছিলেন। আমরা ইচ্ছে অনুযায়ী যে কোনো কেন্দ্রে ভিজিটের সুযোগ পেয়েছি। সবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ভোট বয়কট করেছে, সেটা তাদের বিষয়, এটা আমাদের বিষয় না। কানাডায়ও ভোট ৪৩ শতাংশ পড়েছিল, সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। জনগণ ভোট দিতে পারছে কি না, এটাই দেখার বিষয়। নাইজেরিয়ার সিনেটর প্যাট্রিক সি বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিতে দেখেছি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।

সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তবে প্রধান বিরোধী দল এলে নির্বাচন আরো অংশগ্রহণমূলক হতো। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা ও ভোট পদ্ধতির প্রশংসা করেনি তিনি। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার আন্দ্রে শুটব বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ, খোলামেলা ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। ভোটের নিরাপত্তার পরিবেশও খুব ভালো ছিল। ব্রিফিংয়ে ভোটের প্রশংসা করে আরো প্রতিক্রিয়া জানান, স্কটিশ পার্লামেন্ট, ওআইসি, আরব পার্লামেন্ট ও গাম্বিয়ার প্রতিনিধিরা।

এদিকে শেখ হাসিনার এই কৌশলের পেছনে আরেকটি হলো গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে আমূল পরিবর্তন করতে পেরেছেন তিনি। বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন শেখ হাসিনা। দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব উড়িয়ে দিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর জয়ের মাধ্যমে শুরু হয় মহাউন্নয়নযজ্ঞ। এরপর টানা ক্ষমতায় থেকে দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করে তার সরকার- যার কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। টানা ১৫ বছরে বাংলাদেশকে তিনি নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট স¤প্রসারণ ও পাকাকরণ, শিক্ষা, চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন তিনি। এছাড়া দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা, পোশাক খাতে উন্নয়ন, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর হস্তে কাজ করেন শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ দমন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে এসব নেতিবাচক প্রভাব গত দেড় দশকেও চাড়া দিতে পারেনি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠানো, নারীর ক্ষমতায়ন, সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশন, গ্রামীণ পরিবেশেও শহুরে সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে থাকায় আওয়ামী লীগের পুরো অংশই তার ওপর নির্ভরশীল। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নিজের তত্ত্বাবধানে দেখভাল করেন নিজেই। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে হাইকমান্ড পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থাশীল। শেখ হাসিনা প্রশ্নে আপসহীন নেতাকর্মীদের অবস্থান।

টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে নতুন করে বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন। মেগাসিটি ঢাকায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি টানেল, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তার হাতেই করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর কাজও প্রক্রিয়াধীন। দেশি-বিদেশি সব অপবাদ উড়িয়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মার বুকে ৬ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতু নির্মাণ একমাত্র শেখ হাসিনাকে দিয়েই সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে সহিংসতার পরিমাণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছেন তিনি। জঙ্গিবাদ দূর করতেও সফল তিনি।

এদিকে শেখ হাসিনার নির্বাচনী এই সফলতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। তিনি একজন সফল দলনেতা, সফল রাষ্ট্রনায়ক। দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে তিনি একজন ভিশনারি লিডারে পরিণত হয়েছেন। শেখ হাসিনা একজন বিশ্বনেত্রী। তার জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করিয়েছেন। তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ, সফল কূটনৈতিক।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা একদিনে এই জায়গায় এসে পৌঁছাননি। তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছেন। তার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। তিনি এই দেশে ফিরে এসেছেন একটিই উদ্দেশ্য নিয়ে, আর তা হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার। আজকে আমরা সেই সোনার বাংলা গড়তে পেরেছি। টানা তিন মেয়াদে দলকে একক নেতৃত্বের কারণে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার চতুর্থবারের মতো আবারো দলকে বিজয়ী করেছেন তিনি। এই পথচলাও খুব সহজ ছিল না। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। ভোট প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সবকিছুই পরাজিত হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কাছে। আগামীতেও তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।


শেয়ার করুন