যৌন হয়রানির মামলায় অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক রাজু আহমেদের আগাম জামিন বাতিল করে দিয়ে তাকে হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাদি পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার (১৪ জানুয়ারি) নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক এমদাদুল হক রিপন এই নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি রাজশাহী বিভাগের প্রধান অ্যাড. দিল সেতারা বেগম চুনি।
অ্যাড. দীল সেতারা বেগম চুনি বলেন, মামলা হওয়ার পরে ডা. রাজু আহমেদ হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে জামিন নিয়েছিলেন।
আমরা নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল-১ এ তার জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলাম। আজকে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন বাতিল করেছে এবং হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে। রাজু আহমেদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বারের সভাপতি জাহিদ হোসেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ অক্টোবর নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ডা. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন।
মামলার এজাহারে সাবিনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, ডা. রাজুর ব্যক্তিগত চেম্বারে দাঁতের চিকিৎসা করানোর জন্য তার কিশোরী মেয়েকে নিয়ে যান তিনি। এক পর্যায়ে, তিনি চেম্বার থেকে বের হলে, ডা. রাজু তার মেয়েকে যৌন হয়রানি করেন।
ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে কয়েক দফায় মানববন্ধন করেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ নভেম্বর ডা. রাজুকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন এবং অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ বিষয়ক কমিটিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির কাছে ২২ জন ডা. রাজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত যৌন হয়রানির সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ডা. রাজুকে চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানী প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করেন রাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. আব্দুল আলীম।
ডা. রাজুর ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি নিরোধ সেলকে আরও শক্তিশালী করা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী নেয়া জরুরি।
সাবিনা আপা প্রতিপক্ষের মিথ্যা মামলা ও ভয় উপেক্ষা করে এক আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামী মা হিসেবে লড়ে গেছেন একাকী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হয়েও অপরাধীর বিরুদ্ধে তার লড়াই সকলের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। সকল ভুক্তভোগীকেই উনার মতো সাহসী হয়ে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করতে হবে।’