পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ড. হাছান মাহমুদ নিযুক্ত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল ও আছে। অন্যদিকে, দুই দেশের দীর্ঘ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধশালী ও প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জনগণকে সহায়তা ও কাজ করতে ভারত সবসময় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আমার সঙ্গে মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমাদের মধ্যে নানা বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কানেকটিভিটি ইস্যু, সীমান্ত হাট, বাণিজ্য সম্প্রচারণ ও বিশেষত ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্যকে আরও সম্প্রচারণ নিয়ে কথা হয়েছে। রুপি ও টাকার বিনিময় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আর অল্পকিছু বাণিজ্যও হয়েছে। এটিকে আরও কীভাবে সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করা যায়, সবার কাছে পরিচিত করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে। সেটি হলে ডলার কিংবা অন্য মুদ্রার ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমে যাবে, ভারতেরও কমবে। দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ সহায়ক হবে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বাড়ানো নিয়েও আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য উত্তর-পূর্ব প্রদেশগুলোতে নিয়ে যাওয়া একটি দীর্ঘদিনের ইস্যু। বহুদিনের পুরোনো এই ইস্যু নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন কিছুটা হচ্ছে, এটিকে আরও সম্প্রসারিত করতে আমাদের অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নীতিগতকাঠামো নিয়েও কথা বলেছি। ছোটখাটো কিছু বিষয় আছে, সেগুলো হয়ে গেলেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে রামগড় ও আখাউড়া দিয়ে পণ্য পরিবহন শুরু হবে।
নির্বাচন পরবর্তী কোনো বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। দেশে অগ্নিসন্ত্রাস চালানো হয়েছে। পাঁচ জানুয়ারি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে ট্রেনের ভিতরে একটি পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য মানুষও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এগুলো করা হয়েছে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। এসব বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভারত আমাদের পাশে ছিল, আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়েও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ভারত আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখনো ভারত আমাদের সঙ্গে ছিল। এবারও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভারতের অবস্থান কী ছিল, তা আপনারা জানেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম কোন দেশে সফরে যাচ্ছেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারতেই দ্বিপক্ষীয় সফর প্রথম হবে। তবে বহুপক্ষীয় আলোচনায় যোগ দিতে আগামী ১৭ জানুয়ারি রাতে উগান্ডা সফরে যাচ্ছি। হাইকমিশনার বলেন, গত এক দশকে ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক নজিরবিহীন গতিতে এগিয়েছে। কীভাবে এটা আরও গণমুখী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু বিষয়াদি নিয়েও কথা হয়েছে। কীভাবে এই উন্নয়ন অংশীদারির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হতে পারে এবং কীভাবে আমাদের সহযোগিতা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে কথা হয়েছে। রূপকল্প ২০৩০ সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন ইতিবাচক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আমরা এনার্জি পাইপলাইন, দুটি রেলওয়ে প্রকল্প, বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও টাকা-রুপির বিনিময়, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে সংযোগ নিয়ে কথা বলেছ। হাইকমিশনার বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ, ডিজিাল অর্থনীতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা কীভাবে সহায়তা করতে পারি, সেসব বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেছি। সরকারের নতুন মেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি গতিবেগ আনতে পারব বলে আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী।