স্ট্রোকে ব্রেনের ভেতরের রক্তনালির মধ্যে এক বা একাধিক রক্তনালি ব্লক হয়ে যায় অথবা ছিঁড়ে যায়। ব্রেনের একেকটি অংশ শরীরের একেক অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। স্ট্রোকের ফলে ওই রক্তনালি ব্রেনের যে অংশে রক্ত সরবরাহ করে সচল রাখত, সে অংশ তার কার্যক্ষমতা হারায়। ফলে শরীরের ওই অংশের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়। বেশিভাগ ক্ষেত্রে ব্রেনের যে কোনো একপাশের রক্তনালি ব্লক হয়ে বা ছিঁড়ে গিয়ে স্ট্রোক হয়। সেজন্য স্ট্রোকের লক্ষণও সাধারণত আমাদের শরীরের একপাশে দেখা দেয়।
* স্ট্রোকের লক্ষণ
হঠাৎ করে শরীরের এক পাশের হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, অথবা আলাদাভাবে শুধু একহাত বা পা অবশ হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মুখ বাঁকা হওয়া, খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঠিকমতো দেখতে না পারা-ইত্যাদিও স্ট্রোকের লক্ষণ। একজন সুস্থ সবল ব্যক্তির যখন হঠাৎ এসব সমস্যা দেখা দেবে, তখনই ধরে নিতে হবে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব লক্ষণ দেখে নিকটজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহ করলেই আমাদের উচিত হবে, রোগীকে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ হাসপাতালে, সম্ভব হলে সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। যেখানে অতি দ্রুত ব্রেনের ইমেজিংসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। এসব রোগীর ক্ষেত্রে স্ট্রোক পরবর্তী প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। লক্ষণ শুরু হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায়, ব্রেনের ক্ষতির হার তত কম হয়। স্ট্রোকের কারণে রোগীর শরীরে ঘটে যাওয়া শারীরিক সমস্যার উন্নতির হারও দ্রুত হয়।
* চিকিৎসা
বর্তমানে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে- থ্রম্বোলাইসিস। যেখানে স্ট্রোক হওয়ার সময় থেকে পরবর্তী চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে সিটি স্ক্যান/এমআরআই-সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীর অবস্থা এনালাইসিস করা হয়। রোগী যদি থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসার শর্তাবলী পূরণ করে, তবে সংশ্লিষ্ট রোগীকে স্ট্রোকের এই আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ চিকিৎসায় রেজাল্ট খুবই ভালো। রোগী আরও খারাপ তো হয়-ই না, বরং এক-দুদিনের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থতা লাভ করে। নিঃসন্দেহে এটি বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি আশীর্বাদ। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালে স্ট্রোকের এ সমন্বিত চিকিৎসা চালু আছে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। তবে সবার আগে মনে রাখতে হবে Prevention is better than cure. অর্থাৎ আমাদের চেষ্টা থাকবে স্ট্রোক যাতে না হয়।
* প্রতিরোধ
যাদের ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, হার্টের অসুখ ও রক্তে চর্বি বেশি, তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সুতরাং যাদের এসব রোগ রয়েছে, স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচতে তাদের উচিত হবে এসব রোগ কঠোরভাবে কন্ট্রোল করা। স্ট্রোকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব রোগের উপযুক্ত কন্ট্রোল ছাড়াও কিছু সচেতনতা এবং সতর্কতাও স্ট্রোকের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। ধূমপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা অর্থাৎ কম কায়িক পরিশ্রম করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার না খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদিও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। স্ট্রোক প্রতিরোধে এসব ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
* শীতে কি স্ট্রোক বাড়ে
শীতের সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে। অন্যান্য ডাক্তারি কারণ ছাড়াও এর সাধারণ ব্যাখ্যা হলো-শীতে শরীরের তাপমাত্রা কমে আমাদের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে প্রেশার বেড়ে যায়। আর প্রেশার বেড়ে যাওয়ার ফলে শীতকালে ব্রেনের রক্তনালি ছিঁড়ে হেমোরেজিক স্ট্রোকের হার বেশি হয়। সেজন্য শীতকালে স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচতে অন্যান্য সতর্কতার সঙ্গে নিয়মিত প্রেশার চেক করাও অত্যাবশ্যক। তাৎক্ষণিক রেজাল্টের ভিত্তিতে হাই প্রেসারের রোগীদের ওষুধও সময়ে সময়ে এডজাস্ট করতে হয়।