১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:৪২:৫৫ অপরাহ্ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনহলফনামা খতিয়ে দেখছে দুদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০১-২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনহলফনামা খতিয়ে দেখছে দুদক

সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায় অস্বাভাবিক সম্পদ বাড়ার তথ্য খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেসব প্রার্থীর সম্পদ কয়েক গুণ বেড়েছে, তাঁদের তথ্য দুদক যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নিয়েছে। দুদক এ লক্ষ্যে একটি উপকমিটিও গঠন করেছে। দুদকের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


সূত্রমতে, গত সপ্তাহে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটির একটি উপকমিটিকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই উপকমিটিকে বলা হয়েছে, যেসব প্রার্থীর গত পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, তাঁদের একটি তালিকা করতে এবং সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।


জানতে চাইলে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুযায়ী সম্পদ অনুসন্ধান করা দুদকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।


কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুসন্ধান শুরু হয়। হলফনামার সম্পদের বিষয়গুলো যাচাই বাছাই, অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুদক আইন ও বিধি মোতাবেক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।  


জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন শেষে দুদকের শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠকে হলফনামার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য খোঁজার বিষয়ে মত দেন।


অবশ্য দুদকের অন্য একটি সূত্রের দাবি, পর্যালোচনা শুরু হলেও সরাসরি অনুসন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ওই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হবে। কারণ, এত প্রার্থীর হলফনামা খতিয়ে দেখা বেশ সময়সাপেক্ষ।


দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, হলফনামা তো অনেক। তাই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে অনেক সময়ের দরকার। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, শিগগির অনুসন্ধান শুরু করার কোনো পরিকল্পনা দুদকের নেই। কেবল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।


দুদক সূত্রে জানা যায়, হলফনামায় স্থাবর, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ব্যবসা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষি খাত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, জমি, প্লট, গাড়ি, বাড়িসহ 


নানা অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করা হয়েছে। সেসব সম্পদ তাঁরা কীভাবে অর্জন করেছেন, তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে। দেশে-বিদেশে সম্পদের তথ্য কেউ গোপন করে থাকলে তা-ও খুঁজে বের করা হবে। যাঁদের সম্পদ বৈধভাবে অর্জিত বলে প্রমাণিত হবে, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। আর যাঁদের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।


সূত্রমতে, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও পরাজিত প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাই করতে গিয়ে তাঁদের পোষ্যদের সম্পদেরও হিসাব নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়কর নথিও যাচাই করা হবে। হলফনামা ও আয়কর নথির তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। তাঁদের ব্যাংক হিসাবও যাচাই করা হবে।


নির্বাচনের আগেই হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেখিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া যে ১৮ প্রার্থীর ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে) আছে, তাঁদের মধ্যে ১০ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত, ৮ জন স্বতন্ত্র।


টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, হলফনামার তথ্য যাচাই করে সম্পদশালীদের বিষয়ে অনুসন্ধান না করলে দুদকের প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু দুদক নয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও এ নিয়ে চাইলে কাজ করতে পারে।


সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী হলফনামা হচ্ছে স্বীকৃত আইনি দলিল। রাজনীতিবিদদের সম্পদ কীভাবে বাড়ে, তা নিয়ে কাজ করতে দুদকের দ্বিধা থাকার কথা নয়। শুধু তা-ই নয়, এই হলফনামা সবার আগে খতিয়ে দেখা উচিত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেটা তারা করে না।


শেয়ার করুন