নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। জেলার অনেক বিদ্যালয়ের পাশে ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা নির্মাণ করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এই অবস্থা অনেক দিন ধরে চললেও প্রতিকার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার সীমান্ত নদী বেতনার পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ইটভাটা। অনেক ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। জনবসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ থাকলেও তালা উপজেলার বেড়াডাংগী শতদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ভাটা। পাশেই রয়েছে বেড়াডাংগী ও শাল্যে গ্রামের মানুষের বসতি।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকায় ৯৬টি ইটভাটা রয়েছে। অন্যদিকে ভাটামালিকদের তালিকা অনুযায়ী, ইটভাটা রয়েছে ১১৮টি, যার মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ২৪টির। প্রতিটি ভাটায় নিয়ম মেনে চুল্লি করার কথা থাকলেও তা রয়েছে ৮৩টিতে।
শতদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুলি বিশ্বাস বলেন, ‘যারা এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন বা যারা শিক্ষা নিচ্ছে, তাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে। ভাটার কারণে মাটির রাস্তায় বেশি পরিমাণে ধুলা তৈরি হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। এ ছাড়া ভাটার জন্য পরিচালিত ট্রলি ও ট্রাকের ধুলায় বিদ্যালয়ের জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে খুবই অসুবিধা হয়।’
ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিপন মণ্ডল বলে, ‘বর্ষাকালে খুব কাদা আর শীতকালে খুব ধুলা হয়। এক দিনের বেশি জামা-কাপড় পরা যায় না।’
অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় এসবি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ভাটায় মাটি আনলে সড়কে যেন ধুলা না হয়, সে জন্য পানি দিই। আর এ নিয়ে কেউ অভিযোগও দেয়নি। অন্য ভাটাগুলোর কারণে ধুলা ও কাদার সমস্যা হলে তার দায় আমি কেন নেব?’
সাতক্ষীরার জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাধব দত্ত বলেন, সাতক্ষীরায় ১২৮টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশ অবৈধ। যত্রতত্র কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশদূষণ হচ্ছে। ফসলি জমিতে বা জনবসতি এলাকায় ভাটা স্থাপিত হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ভাটা স্থাপনের বিষয়ে মাধব দত্ত বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সারি সারি ইটভাটা, এটা ভাবা যায়?’
সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সরদার শহীদুল ইসলাম জানান, যেসব ভাটার মালিক ঝিকঝাক কিলন পদ্ধতি (নিয়ম মেনে চুল্লি) করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা হবে। ঝিকঝাকে অন্তত কালো ধোঁয়া বের হয় না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটার বিষয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, ওই অঞ্চলের অধিকাংশ ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা চলমান থাকবে।