রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একবার একটি দল ক্ষমতায় আসে, পরেরবার অন্য দল ক্ষমতায় আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকায় তাদের ভোটগুলো সব সময় বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এ জন্য ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ টার্গেট নেয়, জামায়াতকে বিএনপি থেকে দূরে রাখা। অথবা বিএনপি জামায়াতের যে জোট সেটিকে ভাঙা।
সম্প্রতি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে রাজনৈতিক সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে এক আলোচনায় এসব কথা বলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, প্রথমত তারা চেষ্টার করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াতের নেতৃত্ব পরিবর্তন করে বিকল্প নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াতকে ভাঙতে বিকল্প শক্তিগুলোকেও ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ, সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে।
পরে বিদেশিদের দিয়ে চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে জামায়াত বিরোধীদের একসঙ্গে করার দিল্লির বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ অনেক চেষ্টা করেছে। তবে খুব একটা সুফল পায়নি দিল্লি।
সাবেক সংসদ সদস্য রনি বলেন, ২০১১ ও ২০১২-এর দিকে যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছিল, তখন ‘র’-এর একটি শক্তিশালী গ্রুপ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও কলকাতায় জামায়াত নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ছেলেদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে; কিন্তু কোনো দৃশ্যমান ফল পায়নি। ফলে ওই বছর জামায়াতকে অনেক ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে পড়তে হয়। পরে আবার মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াতের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় যে বৈঠক, সেটিও ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে জামায়াত বিএনপির যে বিভক্তি সেটিতেও ‘র’-এর হাত ছিল। বর্তমানে ভারতের বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা বুঝতে পেরেছে যে, যেভাবে তারা বিশেষ গ্রুপ বা বিশেষ গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে তাদের অনাগত দিনের রাজনীতিতে তাদের খুব একটা ভবিষ্যৎ নেই। এতে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও কূটনৈতিক স্বার্থ সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
এর কারণ হলো— ভারত খুব ভালো করেই জানে যে, জনগণের যখন বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর ওপর থেকে মন উঠে যায়, সেই গোষ্ঠীটি যখন জনগণের অভিশাপের মুখে পড়ে এবং জনগণ যখন ওই গোষ্ঠীটিকে সাহায্য করে না, তারা তখন সাসটেইন করতে পারে না। এটি করতে না পারলে তাদের দেশে-বিদেশে যত গোষ্ঠী আছে সব বিনাশ হয়।
সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনো যে তাদের অবস্থান আছে সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সব হারিয়ে ভারত এখন সব মেধা বাংলাদেশে মনোনিবেশ করেছে। অতীতে যাদের ওপর ভরসা রেখেছিল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখে। বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে টার্গেট করেছে। কোনো কারণে যদি আওয়ামী লীগ ফেইল করে, তা হলে জামায়াতের ওপর আস্থা রাখবে। প্রয়োজনে ইরানের মতো ইসলামিক রেভ্যুলেশন করবে। তাও ভারতের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ হবে।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও নেপাল— যে মিশন নিয়ে ভারত এগোচ্ছিল, সবগুলোতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছে ভারত। কারণ বাংলাদেশ ছাড়া তাদের আর কোনো জায়গা নেই। বাংলাদেশে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে বিকল্প আস্থা হিসেবে জামায়াতকে বেছে নিয়েছে ভারত।
রনি বলেন, পাকিস্তানে যেভাবে ইমরানের জোয়ার উঠেছে, সেটি ভারতের জন্য ইতিবাচক দিক নয়। পাকিস্তানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো শুধু ভারতের জন্য শত্রু নয়, এগুলো এখন আতঙ্কের নাম। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনো যে তাদের (ভারত) অবস্থান আছে, সেটিকে টিকিয়ে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এমন একটি ভৌগোলিকভাবে অবস্থানে আছে, যেটা ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।