মানিকগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে যোগদানের পর থেকে জেলা সদরে অবস্থিত ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু পরবার কল্যাণ কেন্দ্রের চারতলা ভবনের একটি কক্ষকে তিনি রীতিমতো সংসার পেতে বসেছেন।
খাট, সোফা, টিভি, এসি, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল থেকে শুরু করে একটি ছোট্ট পরিবারের জন্য যা দরকার তার সবই ব্যবস্থা রেখেছেন তার রুমে। বিনা ভাড়ায় যেমন থাকেন তেমন খাবারও খান বিনে পয়সায়। তার রুমে যে এসিটি লাগানো হয়েছে সেটি আবার ওই মা ও শিশু পরবার কণ্যাণ কেন্দ্রের ভেতরের নামাজের স্থান থেকে খুলে লাগানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দায়িত্বে থাকা লোকজন জানিয়েছেন ডিডি স্যারের নির্দেশে মসজিদ থেকে এসিটি খুলে তার রুমে লাগানো হয়েছে।
অথচ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পার্সোনেল) জালাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে জেলা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ অফিস সমুহের কক্ষ নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এদিকে আর অফিসের পার্কিং স্থানে বহিরাগতদের মাসিক চুক্তি ভাড়াও দেন তিনি।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের একটি কক্ষটি দখলে রাখা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা প্রশাসক বরাবর রোববার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিজ অফিসেরই এক ভুক্তভোগী।
এ ব্যাপারে ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু পরবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. জেরিন সুলতানা অফিস অভ্যন্তরে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খানের স্থায়ী ভাবে বসবাসের কথা স্বিকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, যেহেতু ডিডি স্যার তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেছেন, ডাক্তার কোয়ার্টারে তার নামে একটি বাসা বরাদ্দ নেওয়া আছে।
সূত্রমতে, ওই মা ও শিশু পরিবার কণ্যাণ কেন্দ্রের অভ্যন্তরের নার্সরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই তিন বেলার খাবার সরবরাহ করে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নার্স অভিযোগ করেছেন দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতির বাজারে তিন বেলা তাদের বিনা মূল্যে খাবার দেওয়াটা তাদের জন্য জুলুম। কি আর করা খাবার না দিলে বদলী করার হুমকিও দেওয়া হয় তাদের।
উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নারী কেলেংকারীর মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ রয়েছে। যোগদানের কয়েক মাসের মাথায় গঙ্গাধরপট্টিস্থ ভাড়া অফিসে মানিকগঞ্জে বাসিন্দা এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে আপত্তিকরভাবে জড়িয়ে ধরে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পরলে ওই নারী স্বামীসহ স্থানীয়দের চাপে কয়েক দিন অফিসে থাকা বন্ধ করে দেন। পরে স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংসা হয়।
ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই পূর্বের কর্মস্থল থেকে তার ঘনিষ্ট এক নারীকে এনে চার তলার তার বাসায় রাখেন। পরে বিষয়টি জানা জানি হলে অফিসের সবাইকে হুমকিধামকি দিয়ে সে যাত্রায়ও মেনেজও করেন।
অভিযোগ রয়েছে, উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান জেলার কোনো অফিসে পরিদর্শনে গেলে উপঢৌকন, ভালো মানের খাবার না দিলে ওই অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীদের দুরবর্তী স্থানে বদলীর ভয় দেখানো হয়। এর পর থেকে অফিস ভিজিটে গেলই আগে ভাগেই ব্যবস্থা থাকে উপঢৌকণ, ভালো মানের খাবাসহ খাবারের পার্সেল।
এসব বিষয়ে কথা হলে উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান যুগান্তরকে বলেন, তার নামে ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু পরবার কণ্যাণ কেন্দ্রের ভেতরে ডাক্তারীর কোয়ার্টারে। কিন্ত তিনি সেখানে না থেকে অফিসেই থাকে। অন্য অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া তিনি মোবাইল ফোনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, এরকম অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।