১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৬:৪১:০৬ অপরাহ্ন
আলোচনায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৪
আলোচনায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ

নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হচ্ছে এমন আলোচনা এবং গুঞ্জন গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই চলছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মন্ত্রিসভার পরিধি বাড়বে কি না এটি প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। তবে সময়মতো কিছু, যেমন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়; এগুলোয় কোনো-না কোনো সময় মন্ত্রী আসবেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের পর নির্বাচিতদের মধ্য থেকে কেউ কেউ মন্ত্রী হতে পারেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী। 


সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই নতুন মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে এমন ভাবনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত আসনের দুই-একজন স্থান পাচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এর বাইরে টেকনোক্র্যাট কোটায় কাউকে কাউকে যুক্ত করা হতে পারে এমন জোর গুঞ্জনও রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায়। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের খবরে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে নতুনদের পাশাপাশি পুরনোরাও জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও এই চেষ্টায় পিছিয়ে নেই ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউও। নিজেদের মতো করে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এমনকি কেউ কেউ বন্ধুরাষ্ট্রের মাধ্যমেও জোর লবিং করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 


এদিকে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের খবরে বঞ্চিত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন মন্ত্রী দেওয়ারও জোর দাবি উঠেছে। বিশেষ করে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভায় কম সদস্য থাকা ছয়টি বিভাগ থেকে বেশি দাবি আসছে। চলমান মন্ত্রিসভায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাধান্য বেশি থাকলেও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অবহেলিত বিভাগগুলোকে প্রাধান্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাও মনে করছেন অনেকে। 


গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ জানুয়ারি। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে রাখা হয়। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে শুধু মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সম্প্রসারণ হলে ফাঁকা থাকা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এই মন্ত্রণালয়গুলোতেও নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে মন্ত্রী থাকলেও নতুন মন্ত্রিসভায় সেটা এখনও ফাঁকা রাখা হয়েছে। এজন্য অনেকেই মনে করছেন, এখানেও নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। 


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক হিসাব-নিকাশ করেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের চূড়ান্ত করে থাকেন। এক্ষেত্রে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি নিজস্ব কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেও মতামত নিয়ে থাকেন তিনি। এবারও এমনটাই করেছেন। ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন ও দুটি মন্ত্রণালয় ফাঁকা রাখার পর অনেকের মধ্যেই ধারণা তৈরি হয় মন্ত্রিসভার আকার বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ নিয়ে এবার বেশি কালক্ষেপণ করবেন না প্রধানমন্ত্রী। 


দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নারী নেত্রীদের সুযোগ করে দিতে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে এতদিন কালক্ষেপণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিতদের শপথগ্রহণের পর সেটা ত্বরান্বিত হবে। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানকে নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম দায়িত্ব পাচ্ছেন এমন আলোচনাও রয়েছে দলের মধ্যে। নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন এমন কাউকে কাউকেও নিয়ে আসা হতে পারে মন্ত্রিসভায় এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এর বাইরে আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিন বছরের চুক্তিতে ছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তি বাতিল করে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার পর থেকে অনেকেই মনে করছেন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে টেকনোক্র্যাট কোটায়।


এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন আগামী ১৪ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। বরাবরের মতোই সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয়ভাবে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কারণে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত যেতে হবে না। এক্ষেত্রে ২৫ ফেব্রুয়ারি পার হওয়ার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি শবে বরাতের বন্ধ থাকায় পরদিনই তাদের নির্বাচিত করে গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে। 


এই প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মোতাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করবে। তারপর শপথ হবে। আশা করা যায় আগামী ২৭ বা ২৮ তারিখ শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে। 


এদিকে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনার পর যেটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে সংরক্ষিত নারী আসনের শপথের পরপরই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে খুব বেশি কালক্ষেপণ করা হবে না। 


চেষ্টায় আছেন ১৪ দলের শরিকরাও :


আসন ভাগাভাগী ও মনোনয়ন নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও এবার মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের দিকে তাকিয়ে আছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কেউ কেউ। জোটের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময় দায়িত্ব পালন করা নেতাদের পাশাপাশি মনোনয়ন না পাওয়া ও মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়া নেতারাও এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া দিলীপ বড়ুয়া তার ঘনিষ্ঠ একটি বন্ধুরাষ্ট্রকে দিয়ে জোর লবিং চালাচ্ছেন সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার জন্য। অন্য শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ তাকিয়ে আছেন জোট নেত্রীর দিকে। 


বঞ্চিত অঞ্চলগুলো থেকে নতুন মন্ত্রীর জোর দাবি : 


প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার ঢাকা বিভাগ থেকে ১৫ জনকে রাখা হয়েছে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এই বিভাগ থেকে দেওয়া হয়েছে ৯ জনকে। ৩ জন সদস্য নিয়ে পরের স্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ। বাকি বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুজন করে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। বরাবর সুনজরে থাকা সিলেট এবার অবহেলিতদের তালিকায়। এবার সিলেট বিভাগ থেকে দুজনকে মন্ত্রী ও একজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ডা. সামন্তলাল সেন টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। মৌলভীবাজার-৪ থেকে নির্বাচিত উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ মন্ত্রী হয়েছেন। আর সিলেট-২ থেকে নির্বাচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। গত মন্ত্রিসভায় এই বিভাগ থেকে পাঁচজন সদস্য ছিলেন। 


গত সরকারের সময় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে চার মন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, সেই সংখ্যা এবার চারে এসে ঠেকেছে। গতবার পঞ্চগড় থেকে নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী এবং রংপুর থেকে টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী হলেও এবার এই দুজনই বাদ পড়েছেন। এছাড়া রাজশাহীর আট জেলার মধ্যে নাটোর ও নওগাঁ থেকে পুরোনো দুই সদস্য স্থান পেলেও বাকি জেলাগুলো বঞ্চিতই রয়ে গেছে। অন্যদিকে বৃহত্তর রংপুর থেকে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। খুলনা বিভাগে গত দুই মেয়াদে চারজন করে মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবার রয়েছেন মাত্র দুজন। এছাড়া বরিশাল বিভাগে একজন পূর্ণ মন্ত্রী না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক ও পটুয়াখালী-৪ আসনের মুহিববুর রহমান। একইভাবে গত দুই মেয়াদের চেয়ে কম মন্ত্রী পেয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগও। এবার দুজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে এই বিভাগ থেকে। ময়মনসিংহ-৯ থেকে নবনির্বাচিত এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে।


সম্প্রসারিত হতে যাওয়া নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রত্যাশার বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা গতকাল শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ব্যক্তিগত প্রাপ্তিতে কে না খুশি হয়। তবে আঞ্চলিক ও সমষ্টিগত প্রত্যাশা ও চাওয়া রয়েছে। এই অঞ্চল থেকে কাউকে সুযোগ করে দেওয়া হলে পুরো অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।


শেয়ার করুন