রাজশাহী পুঠিয়ায় উপজেলা প্রশাসন এবং থানার সঙ্গে ট্রাক মালিকদের সমঝোতা থাকায় সারারাত উপজেলার বিভিন্ন সড়কে টাক্টর ও ১০ চাকার ড্রাম ট্রাকগুলো পুকুর খননের মাটি পরিবহন করতে গিয়ে গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে।
এতে করে উপজেলার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সড়কগুলো নির্মাণ করা ও সংস্কার কাজ শেষ না হতে পূর্বের ন্যায় গর্ত ভাঙাচুড়া আকার ধারণ করছে। সড়কে মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রশাসন প্রতিদিন কাড়িকাড়ি টাকা পাওয়ার জন্য তারা কোনো কঠোর কোনো পদক্ষেপ গ্রাহন করছে না।
শিলমাড়িয়ায় ইউনিয়নে (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের একজন প্রভাবশালী নেতার সাতজন অনুসারী মিলে একটি পুকুর খনন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবশ্য তাদের টাকা দিলে পুকুর খনন করতে দিচ্ছেন। খননের টাকা ওই নেতার নিকটে পৌঁছে দিতে হয়। এদিকে প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা হলে কোনো জরিমানা হয় না। আর সমঝোতা না হলেই জরিমানা হয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
গত (বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল) রাতে এক পুঠিয়া-দুর্গাপুরের পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজে পুকুর খননকারী দুইটি ভেকু এবং একটি মোটর-সাইকেল ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসীর রোশানলে পরে পুলিশের গাড়িসহ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়।
এ বিষয়ে উপজেলার প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মোট ৬শ’ ৪৫ কিমি সড়কপথ রয়েছে। এর মধ্যে পাকা সড়কের রয়েছে ৩শ ৩৪ কিলোমিটার। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের এবং থানা পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে পুকুর খননের কাজ চলছে। পুকুর খননকারীদের মাটি পরিবহন কাজে নিয়োজিত প্রতিদিন অর্থশতাধিক ১০ চাকার ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টর উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। বেশিভাগ ট্রাকের আবার লাইসেন্স নাম্বার নেই।
একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, রাতেরআধাঁরে ৩০/৪০ টন মাটি নিয়ে তিব্র গতিতে যখন ট্রাকগুলো যাতায়াত করছে তখন শব্দে সড়কের পাশে থাকা ঘড়বাড়িগুলো কেঁপে উঠছে। সড়কের পাশে থাকা সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম হচ্ছে। ট্রাকের অতিরিক্ত ওজনের কারণে সড়কগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন স্থানীয় গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট করার সংবাদ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষরা উপজেলা প্রশাসন এবং থানার নিকট দিচ্ছেন। কিন্তু তারা কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। যার কারণে সংস্কার বা নির্মাণ করার শেষ না হতে সড়কগুলো পূর্বের ন্যায় গর্ত ভাঙাচুড়া আকার ধারণ করছে। এর ফলে সড়কগুলো সাধারণ মানুষদের চলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। পরবর্তী সময়ে মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সোহেল মাহাম্মুদ নামক ব্যক্তির অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ট্রাকগুলো গোপন সমঝতা রয়েছে। এজন্য রাতে থানার সামনে দিয়ে প্রায় ৩০টির মত ড্রামট্রাক নীচু স্থান ভরাট করা এবং ইটভাটার মাটি পরিবহন করছে। উপজেলা সদরের বিভিন্ন পাকা সড়কে পুকুর খননে মাটির পরে রয়েছে। যা বৃষ্টি হলে সড়কগুলো বিপদজনক হয়ে পড়বে। এই গাড়িগুলির সঠিক কোনো নাম্বার প্লেট নেই। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন রকম জরিমানা কিংবা ভ্রাম্যমাণ করা হচ্ছে না। অপরদিকে ক্ষমতাসিন দলের প্রায় নেতাদের পুকুর খনন করা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ গড়ে তুলছেন না।
এলাকার মানুষ উপজেলা প্রশাসান এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ এবং চুক্তি করে পুকুর খনন করছে। নীচু স্থানের মাটি ভরাট এবং ইটেরভাটার মাটি বিক্রির হোতা হলো নাটোর জেলার সান্টু এবং নয়ন। এরাই সংশ্লিষ্টদের সবার সঙ্গে চুক্তি করে বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি করছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ সাইদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সে রাজশাহীতে থাকার কথা বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ড্রামট্রাকের বিরুদ্ধে জরিমানা করেছি। আগামীতে আরো কিছু ভ্রাম্যমাণের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। তবে পুকুর খননকাদীর বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে পুকুর খনন করা বন্ধ হবে না।