আসছে অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা খরচে রক্ষণশীলতার পথে হাঁটতে যাচ্ছে সরকার। আগের দুই অর্থবছরে যে হারে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের আকার বাড়ানো হতো, আসছে অর্থবছরে বলতে গেলে বরাদ্দ খুব একটা বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারের চেয়ে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। নিকট অতীতে এডিপির আকার এত কম কখনোই বাড়ানো হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের কয়েকটি বছর যেভাবে হাত খুলে খরচ করত, আসছে অর্থবছরে এ খরচের হাত সংকুচিত করা হতে পারে। সে কারণেই এডিপির আকার নামমাত্র বাড়ানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, আসছে অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন এই খসড়াই চূড়ান্ত করেছে। এটিই সামনের এনইসিতে অনুমোদন দিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হবে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি ও বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন মিলিয়ে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অথচ আগের প্রায় প্রতিটি এডিপির আকারই বেশ বাড়ানো হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এরপর ২০২৩-২৪ বা চলতি অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার ধরা হয় ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপির আকার ২১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছিল। আবার ২০২২-২৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসছে অর্থবছরে এডিপির আকার বাড়ছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ এডিপির আকার বাড়ানোর যে প্রতিযোগিতা প্রতিবছর ছিল, সেখান থেকে সরে এসেছে সরকার। ফলে সামনের দিনগুলোতে আগের অর্থবছরের মতো উন্নয়ন প্রকল্পের হিড়িক আসছে অর্থবছরে না-ও দেখা যেতে পারে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকার যেহেতু উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রতিবছর নিজস্ব উৎসের অংশীদারত্ব বাড়াচ্ছিল, সম্প্রতি রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রবণতার কারণে তহবিলসংকট দেখা দেয়। তাই সামনের অর্থবছরে বেশি বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রবণতা কমানো হতে পারে। এর কারণেই হয়তো এডিপির আকার খুব একটা বাড়ানো হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র আরও জানায়, প্রস্তাবিত এডিপিতে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ অঙ্ক ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। আর মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি, ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ ছাড়া ১৫টি খাতের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা খাত। অন্যান্য খাতের মধ্যে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ, স্বাস্থ্যে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ এবং কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে। সেখানে বরাদ্দ থাকছে ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ, ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।