দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও বাড়ছে। অথচ ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য যে আইনি কাঠামো দরকার, সেটা বাংলাদেশে নেই। ঋণখেলাপির মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কারণ সেখানে যথেষ্ট বিচারক নেই। ব্যাংক খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে। এরই মধ্যে ব্যাংক খাতে তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে। এ খাত পুনর্গঠনে একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কী অপেক্ষা করছে’ শীর্ষক সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমীন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়। অথচ এখানে সেটা নিশ্চিত না করে উলটো তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফশিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বাংলাদেশ ব্যাংক) নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। বাংলাদেশে ব্যাংকের বাইরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা, সেটা করছে না বা পারছে না। ব্যাংকগুলোর সব তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ পাচ্ছে না। যারা প্রকাশ করে না, তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। যতটুকু প্রকাশিত হয়, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ থাকে। আর একটি বিষয় হচ্ছে তথ্যের দরজা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমরা তথ্যের জন্য মিডিয়ার ওপর নির্ভর করতাম, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তথ্যের অভাবের কারণে ভুল নীতি গৃহীত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফেরাতে স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই।