কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারে পুলিশের গুলির কথা কোথাও উল্লেখ নেই। বেশিরভাগ এজাহারে হত্যাকারী হিসাবে অজ্ঞাতনামা তৃতীয় পক্ষের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। পুলিশের ভাষায় তারা দুষ্কৃতকারী। হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ হত্যা মামলার বাদী পুলিশ।
এদিকে সুরতহাল প্রতিবেদনেও লাশের শরীরে গুলির চিহ্ন এড়িয়ে গেছে পুলিশ। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ গানশট ইনজুরির (গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু) লেখা থাকলেও সুরতহালে গুলির আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। সহিংসতার ঘটনায় ডিএমপিতে (ঢাকা মহানগর পুলিশ) হত্যা মামলার সংখ্যা ৫৩টি। এতে ৩ পুলিশ সদস্যসহ রাজধানীতে ১৫০ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী ছাড়াও এদের মধ্যে ব্যবসায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং অজ্ঞাতনামা পথচারী রয়েছেন। তাদের সবার মরদেহ ইতোমধ্যে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
হত্যা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ৯০ ভাগ মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। আসামির ঘরে অজ্ঞাতনামাদের কথা বলা হয়েছে। ফলে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে হয়রানির আশঙ্কা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। এমনকি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে এসব মামলা।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে জানা যায়, সহিংসতার ঘটনায় ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ২৭৪টি। দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৮৪ ১৪৯ ৩০৭ ও ৩০২ সহ আরও বেশকিছু ধারায় এসব মামলা করা হয়েছে। এতে বৈআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সরকারি কাজে বাধা, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫৩টি হত্যা মামলা।
পুলিশ জানায়, আন্দোলনে সহিংস হয়ে ওঠা যাত্রাবাড়ীতে সর্বাধিক ১৬টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া কদমতলীতে ৪, বাড্ডায় ৫, ভাটারায় ৩, পল্টন ও নিউমার্কেটে ৬টি, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কাফরুলে যথাক্রমে ২টি করে এবং খিলগাঁওয়ে, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, হাতিরঝিল, উত্তরা পশ্চিম ও পূর্ব থানায় ১টি করে হত্যা মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলার সংখ্যা তিনটি।
এজাহার : ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৭ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে সাংবাদিক হাসান মেহেদীসহ ৫ জনের পরিচয় পাওয়া যায়। বাকি দুজনের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় ২৭ জুলাই একটি হত্যা মামলা করা হয়। বাদী এসআই (উপ-পরিদর্শক) হোসেন যায়েদের এজাহারে বলা হয়, কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত পাকা রাস্তার ওপর অজ্ঞাতনামা প্রায় ২০-৩০ হাজার বিএনপি-জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দুষ্কৃতকারী কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের আড়ালে সমবেত হয়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় ফুটওভার ব্রিজ, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, সরকারি-বেসরকারি অফিস, হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, সড়ক বিভাজক, বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর, থানা ভবন দখল এবং অস্ত্র-গুলি নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।