সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার (৫ আগস্ট) রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
এতে এক যুবক নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, নগরীর শাহ মখদুম কলেজসংলগ্ন এলাকায় আন্দোলনকারী এক যুবককে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া যুবক নিহতের বিষয়টি পুলিশের তরফ থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জন এসেছেন রাজশাহী মহানগর থেকে। আর তিনজন এসেছেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে। ভর্তি হওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩০ জনই গুলিবিদ্ধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নগরীর তালাইমারী মোড়ে জড়ো হন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সাহেববাজারের দিকে রওনা হন। আর আলুপট্টি মোড়ে সশস্ত্র অবস্থায় অপেক্ষা করছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি স্বচ্ছ টাওয়ার মোড়ে পৌঁছলে তারা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। এ সময় বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পিছু হটতে বাধ্য হন। এরপর পুলিশ এলে তারা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। এ সময় আবারো বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া হয়। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহত হন অর্ধশতাধিক।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, মহানগরীর অবস্থা এখন শান্ত রয়েছে। তবে এখনো পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তবে নগরীতে সঙ্ঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা জানাতে পারেননি ওসি।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তখন আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ডাইংপাড়া মোড় ছেড়ে থানার দিকে চলে যায়। তখন আন্দোলনকারীরা ডাইংপাড়া মোড়ে ঢুকে যায়।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ডাইংপাড়া মোড়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের দোকান ভাঙচুর করেন। পরে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে, সরকারের পতনের খবরে পুরো রাজশাহীজুড়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন ছাত্রজনতা। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিভিন্ন বয়েসী মানুষ আনন্দ মিছিল বের করেন। তবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ ফাঁড়ি, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।