২২ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:১৮:২২ অপরাহ্ন
পাশে থাকার বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৯-২০২৪
পাশে থাকার বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে শেখ হাসিনার বিদায়ের পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, সহায়তা করতে তারা প্রস্তুত। 


ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান ও পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লুর নেতৃত্বাধীন দলের সঙ্গে গতকাল রোববার বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই বৈঠকে সহায়তার বিষয়ে কথা বলে দুই পক্ষ। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে গতকাল আরও ছয়টি বৈঠক করে প্রতিনিধিদলটি। 


নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাসখানেক পরই অনুষ্ঠিত এ বৈঠকগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় কূটনীতিকেরা। 


প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠক করে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি। এ সময় সরকারের নেওয়া সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, দ্রুততার সঙ্গে ঝুঁকির মুখে থাকা অর্থনীতি পুনর্গঠন, আর্থিক খাত, নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও পুলিশে সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার। 


ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের ভাষ্য তুলে ধরে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে বলেছে, ‘বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে আমাদের প্রতিনিধিদল। যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র সে প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’ 


বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আঁকা গ্রাফিতির ছবিসংবলিত একটি আর্টবুক মার্কিন প্রতিনিধিদলকে উপহার দেন ড. ইউনূস। 


অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। পরে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মার্কিন সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশে আর্থিক খাত ও কর কাঠামোয় সংস্কার, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, রপ্তানি বহুমুখী করা ও বাজার উন্নয়নসহ সার্বিক ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের কাছে অর্থসহায়তাও চাওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন। 


আর এই বৈঠকের পর প্রতিনিধিদলের তরফ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের নতুন উদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করবে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে সহায়তার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পায়। 


রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও। এ বৈঠকের পর বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিনিধিদল বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের পাশাপাশি এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 


শেয়ার করুন