ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এক ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাসহ ঢাবির ৩ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আটকরা হলেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের মোহাম্মদ সুমন এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মোত্তাকিন সাকিন। জালাল আহমেদ ছাত্রলীগ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন। তাদেরকে ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে আটক করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চোর সন্দেহে যুবককে পেটানোর সময় প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আব্দুস সামাদ, ফার্মেসি বিভাগের মোহাম্মদ ইয়ামুজ জামান এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের মোত্তাকিন সাকিন। নির্যাতন করা শিক্ষার্থীদের সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।
এর আগে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করেন। পরে তাকে প্রথমে হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে তিনি মোবাইল ফোন চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারে। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান।
তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ানো হয়। পরে হলের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তারা সহায়তা করে অচেতন যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
জানা গেছে, নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।