বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই চাপের মধ্যে আওয়ামীপন্থি শিল্পীরা। এমনকি সামাজিকমাধ্যমেও কটাক্ষের মুখে পড়ছেন তারা। অনেক শিল্পীই গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন এবং চেয়েছিলেন। তাদেরই একজন অভিনেত্রী সোহানা সাবা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজের অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে নিদারুণ কটাক্ষের শিকার হলেও সাবা কখনই কোনো বিষয়ে নিজের মতপ্রকাশ থেকে বিরত থাকেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবসময় তার সরব উপস্থিতি। প্রায়ই নিজের মনোভাব প্রকাশ করেন ফেসবুকের মাধ্যমে। সেই ধারাবাহিকতায় রোববার (২০ অক্টোবর) একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেন এ অভিনেত্রী। যেখানে তিনি লেখাটা শুরু করেছেন সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী মনি কিশোরকে নিয়ে।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে সাবা লিখেছেন— মনি কিশোর নামে একজন গায়ক মারা গেছেন আজ সকালে জানতে পারলাম। তার গানগুলো শুনে শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু তিনি যে বেঁচে আছেন বা কোথাও আছেন সে সম্পর্কে কখনো কোনো কৌতূহল তৈরি হয়নি। তার মতো একজন গুণী গায়ক সে রকম কোনো সুযোগ-সুবিধা চেয়েছেন বা পেয়েছেন বলেও আমার জানা নেই। ভালো হয়েছে যে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন।
সোহানা সাবা আরও লিখেছেন— তিনি যদি সবার সামনে থাকতেন, অনেক শিল্পীর জন্য অথবা অনেক অযোগ্য শিল্পীর জন্য তিনি থ্রেট হিসেবে থাকতেন! তখন সে অশিল্পীরা বা অযোগ্য লোকেরা এসে কোনো একটা দুর্বলতার মুহূর্তে বলে উঠতেন— ওর কি কোনো বেল আছে? ও কি শিল্পী হওয়ার যোগ্য? একটা-দুইটা গান গেয়ে ফেমাস হয়ে নিজের শিল্পী হিসেবে সত্তাকে বেচে দিয়েছেন!
সোহানা সাবা বলেন, কদিন আগে একটা চমৎকার পর্যালোচনা পড়ছিলাম, কী করে একটি অপ্রতুল দ্বীপে বড় মাংসাশী প্রাণীগুলো সাইজে ছোট হতে থাকে এবং কী করে ছোট প্রাণী যেমন টিকটিকি-গিরগিটি সাইজে বড় হতে থাকে। কী করে আমাদের দেশে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি থাকতে কিছু মাথামোটা মানুষ সবার জাতীয় পণ্ডিতে পরিণত হয়! কী করে চমৎকার কিছু সিনেমায় চমৎকার অভিনয়ের পরেও কিছু মানুষ নিজের নামের পূর্বে ‘হিরো’ লাগিয়ে জাতীয় হিরোতে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে ভুলভাল কাণ্ড করে অথবা সেলিব্রিটিদের সঙ্গে নিজের পিআর বাড়িয়ে নিজেদের সেলিব্রিটি ভাবলেই কি আপনি সত্যিকারের শিল্পী হয়ে উঠলেন? একবার ভাবুন— মাথাটা খাটান। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। অবশ্য মাথা এবং আয়না পরিষ্কার থাকলে পরিষ্কার দেখতে পাবেন, নাহলে কিছুই দেখতে পাবেন না। এই ভুল ধারণা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে প্রয়াত অভিনেত্রী ও নির্মাতা কবরীর ‘আয়না’ চলচ্চিত্রে পা রাখেন সোহানা সাবা। ‘খেলাঘর’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘বৃহন্নলা’ ও ‘ষড়রিপু’ সিনেমায় কাজ করে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।