১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:১৭:১৬ অপরাহ্ন
দেশে এখন একমাত্র মেয়র শাহাদাত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১১-২০২৪
দেশে এখন একমাত্র মেয়র শাহাদাত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন মেয়রবিহীন থাকলেও ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম।নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর আদালতের দেওয়া রায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে রোববার (৩ নভেম্বর) শপথ নিয়েছেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। এর ফলে দেশে এই মুহূর্তে একমাত্র মেয়র তিনি।


গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’-এর ধারা ১৩-ক প্রয়োগ করে চট্টগ্রামসহ ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। একই দিন জারি করা অন্য এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।


সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণের ১ মাস ২১ দিন পর ১ অক্টোবর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. খাইরুল আমিন এক রায়ে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন।


আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন থেকে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে মো. রেজাউল করিমের স্থলে শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু আগেই অন্যান্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারিত হওয়ায় শাহাদাত হোসেনের মেয়র পদে আসীন হওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চলে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। এর মধ্যে ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা এক সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে গত ১৯ আগস্ট জারি করা বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনগুলোর প্রশাসক নিয়োগ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অংশ বিলুপ্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনের শপথগ্রহণের পথে বাধা দূর হয়।


২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮টি। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম রেজাউল করিম চৌধুরী।


এদিকে, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বাতিল চেয়ে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমিন ওই মামলার রায়ে আগের ফলাফল বাতিল করে শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন।


 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ রোববার সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।


শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা হাসান আরিফ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেন বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের একটি প্রধান নগরীর মেয়র হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন এটাই তার কাছে প্রত্যাশা করি। আমরা গ্রিন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা।


উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, চট্টগ্রামে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, যারা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবেন। আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়রের মেয়াদ ঠিক হবে।


শপথ নিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। যদি চট্টগ্রাম শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করা যায়, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি এসব আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবো।


১৯৬৬ সালের ২ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহাদাত হোসেন। ছাত্রদলের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রদল সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এমবিবিএস পাস করার পর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি ছিলেন। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও করা হয়েছিল ডা. শাহাদাতকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও তিনি। নগর-বিএনপির একাধারে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর সর্বশেষ আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।


শেয়ার করুন