২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৪:০৮:৩৪ অপরাহ্ন
কুয়েটে ভিসির পদত্যাগের দাবি: অনশনের ১৮ ঘণ্টা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৪-২০২৫
কুয়েটে ভিসির পদত্যাগের দাবি: অনশনের ১৮ ঘণ্টা

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩২ শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে অনশনের ১৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।


এদিকে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।


মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) পরিস্থিতি মূল্যায়নে দুজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কুয়েট ক্যাম্পাসে সরেজমিনে পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।


আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রের প্রধান ফটকে দেখা যায়, অনশনকারীরা একটি বড় মশারির নিচে শুয়ে আছেন। কেউ বই পড়ছেন, আবার কারও পাশে বালিশ ও চাদর এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। কয়েকটি স্ট্যান্ড ফ্যান চলছে সেখানে। কাছেই একটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা অনশনকারীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।


গতকাল বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা ড. এম.এ. রশিদ হলের সামনে তোষক, বালিশ, বিছানার চাদর নিয়ে জড়ো হন। তারা সেখান থেকে ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, সিন্ডিকেট সদস্য, বিভাগীয় প্রধান এবং অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


এদিন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে সংবাদ সম্মেলনে অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে তারা ফলের রস নিয়ে যান। কিন্তু আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনার পরও শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকরা সেখান থেকে চলে যান।


চলে যাওয়ার আগে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আখতার শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য সমাধান খুঁজে বের করা। ১৮ তারিখের ঘটনা এখন বড় ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই। আমার অফিসের দরজা সবসময় তোমাদের জন্য খোলা। আমরা ফিরে আসব, আমাদের শিক্ষকরাও আসবেন।’


জবাবে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এটা ৩২ জনের প্রাণের বিপরীতে একটি পদের বিষয়। আমরা কোনো তর্ক করব না, কোনো বিতর্ক করব না। যাই বলা হোক না কেন, আমাদের একটাই উত্তর—আমাদের এক দফা দাবি মানতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিস্থিতির কথা বলেছি, কিন্তু আপনারা শোনেননি।’


লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ তৌফিক আহমেদ বলেন, ‘আলোচনার আর সময় নেই। আমরা আগে চেষ্টা করেছি—হল খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছি, আপস প্রস্তাব দিয়েছি। হয়তো আমাদের পাঁচ দফা দাবি মানা হলে একটা সমাধান হতে পারত। এখন যেহেতু আমরা কঠোর অবস্থানে গেছি, তাই আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই।’


গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি পক্ষ দাবি করে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে তাদের আন্দোলনে বহিরাগতরা হামলা করেছে, যারা ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত।


অন্যদিকে, ছাত্রদল অভিযোগ করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। এর জেরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে এবং ভিসি, প্রো-ভিসি ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।


এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা তাদের ছয় দফা দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেন। পরবর্তীতে, ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অনির্দিষ্টকালের জন্য সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। প্রশাসন ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে।


শেয়ার করুন