ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় গাজায় একদিনে আরও ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চালানো এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৮ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অনেকে ধ্বংস্তূপের তলায় চাপা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিহত ও আহতের হিসেব সংক্রান্ত গণনাতেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫১ হাজার ৪০০ জন এবং ১ লাখ ১৬ হাজার ৪১৬ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই জিম্মিদের মুক্তি এবং তার বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে অন্তরীণ ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ।
দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে গত ৩৮ দিনে গাজায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৬০ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৭৫ জন ফিলিস্তিনি।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ ঘোষণা দিয়েছে, সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হবে।
এদিকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য একাধিকবার আহ্বান জানানো হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।