৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ০৬:৫৬:২৭ অপরাহ্ন
প্রাথমিক শিক্ষায় কমছে ২ হাজার কোটি টাকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৫
প্রাথমিক শিক্ষায় কমছে ২ হাজার কোটি টাকা

শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবির মধ্যেই আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। অর্থবিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এই মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হবে ১১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা।


সেই তুলনায় বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৯২০ কোটি (প্রায় দুই হাজার কোটি) টাকা। আর সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ রয়েছে ১২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এ থেকেও বরাদ্দ কমবে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ৪০৫ কোটি টাকার কমবে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে। পাশাপাশি এক টাকাও মিলছে না চার প্রকল্পে। গত ২১ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।


জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী রোববার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে এ বছর ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে অতিদরিদ্র হবে। সেটি যদি হয় তাহলে সবার আগে আঘাত আসবে শিক্ষা খাতে। এই মুহূর্তে যদি প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ না বাড়িয়ে বরং কমানো হয় তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 


এছাড়া দেখেন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে উপবৃত্তির অ্যাডজাস্টমেন্টও করা হচ্ছে না। এটা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তবে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে সেটির খরচ খুব বেশি হয়নি। আমাদের দেশে বরাদ্দ বাস্তবায়নে সক্ষমতায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগও নেওয়া হয়নি কখনো। এ কারণেও সরকার হয়তো আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ কমাতে চাইছে। তবে এত বড় একটি অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার উন্নয়নকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা। কেননা জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষায় অনেক ঘাটতি হয়েছে। এদিকে বরাদ্দ কমায় অবকাঠামো উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে।


বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়, গত ১৫ এপ্রিল অর্থ বিভাগের জারি করা বাজেট পরিপত্র-২ অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলো থেকে রাজস্ব প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। 


এছাড়া মন্ত্রণালয়টির পরিচালন খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন খাতের ব্যয় ১১ হাজার ৩৯৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।


আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ৯টি প্রকল্পের অনুকূলে উন্নয়ন খাতের এই প্রস্তাবিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এগুলো হলো-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ (চতুর্থ পর্যায়) প্রকল্পের অনুকূলে আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া আছে। 


এছাড়া চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) অনুকূলে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে রয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা, চলতি এডিপিতে রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। প্রি-প্রাইমারি অ্যান্ড প্রাইমারি এডুকেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ইন কক্সবাজার অ্যান্ড ভাসানচর নোয়াখালী প্রকল্পের অনুকূলে প্রস্তাব রয়েছে ৩৩১ কোটি টাকা। আগে এটিতে কোনো বরাদ্দ ছিল না। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪) বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রয়েছে ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।


আরও আছে, চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পে (প্রথম পর্যায়) কোনো বরাদ্দই প্রস্তাব করা হয়নি। তবে চলতি অর্থবছরে এটির অনুকূলে রয়েছে ৪৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্পের অনুকূলে এক টাকাও ধরা হয়নি। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ আছে ৫২ কোটি টাকা। শূন্য বরাদ্দের তালিকায় আছে কুড়িগ্রামের রৌমারী পিটিআই স্থাপন প্রকল্প, চলতি অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া আছে ১০ কোটি টাকা। বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতাকেন্দ্রিক সাক্ষরতা প্রকল্পের কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়নি। তবে চলতি অর্থবছরে দেওয়া আছে ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। 


পরিকল্পনা কমিশন জানায়, এ বছর অর্থ বরাদ্দে ব্যাপক কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রয়োজনী প্রকল্প ছাড়া অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে যেসব প্রকল্প সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে কেবল সেগুলোকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া নাও হতে পারে।


শেয়ার করুন