১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:৫১:২১ অপরাহ্ন
নারীকে ছেঁচড়ে এক কিমি: ঢাবির সাবেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১২-২০২২
নারীকে ছেঁচড়ে এক কিমি: ঢাবির সাবেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রুবিনা আক্তার (৪৫) নামের এক নারীকে প্রাইভেটকারের ধাক্কা দিয়ে ফেলে এক কিলোমিটার পর্যন্ত ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত শিক্ষক আজহার জাফর শাহর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

শনিবার রাজধানীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ আদালতে মামলার এজাহার ও এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) এলে বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন। 

শুক্রবার গভীর রাতে রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে সড়ক পরিবহণ আইনে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেছেন। 

শাহবাগ থানার এসআই (উপপরিদর্শক) শাহ আলম জানান, বেপরোয়াভাবে প্রাইভেটকার চালিয়ে রুবিনা আক্তারকে মেরে ফেলার ঘটনায় সড়ক পরিবহণ আইনে মামলা করা হয়েছে। 

আজহার জাফর শাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক। গণপিটুনির পর তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেবর নুরুল আমিনের (৪০) বাইকে হাজারীবাগ যাচ্ছিলেন রুবিনা আক্তার। তারা শাহবাগ মোড়ে পৌঁছলে প্রাইভেটকারটি পেছন থেকে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে রুবিনা প্রাইভেটকারের নিচে পড়ে যান এবং তার গায়ের কাপড় কারের নিচে আটকে যায়। ওই অবস্থায় নারীকে টেনেহিঁচড়ে রাজু ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেতের দিকে ছুটতে থাকেন চালক। পথচারীরা চারদিক থেকে চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বললেও তিনি বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। এসময় দুই মোটরসাইকেল চালক ও স্থানীয় লোকজন কারটি ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে নীলক্ষেতে গিয়ে কারের গতিরোধ করতে সক্ষম হন তারা। পরে গাড়ির নিচ থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় রুবিনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

স্থানীয়রা জানান, যখন গাড়িরোধ করে ওই নারীকে নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়, তখনও চালক শিক্ষক গাড়ির ভেতর দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন। পরে তাকে বের করে গণপিটুনি দেওয়া হয়। গাড়িও ভাঙচুর করে জনতা। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জানান, গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। চালক জাফরের অবস্থাও ভালো নয়। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আজহার জাফর এক সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ক্লাসসহ একাডেমিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

নিহত রুবিনা আক্তারের স্বজনরা জানান, তিনি রাজধানীর তেজগাঁও তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা। তেজগাঁও থেকে দেবরের মোটরসাইকেলে হাজারীবাগে বাবার বাসায় যাচ্ছিলেন তিনি। বিকালে ঢামেক হাসপাতালে বোনের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ভাই জাকির হোসেন। তিনি জানান, রুবিনার স্বামী মাহবুবুর রহমান খান ডলার বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলে রয়েছে তাদের। শুক্রবার রাতে শাহবাগ থানায় সংবাদ সম্মেলনে রমনা জোনের ডিসি শহীদুল্লাহ জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। তিনি বলেন, সড়ক আইন অনুযায়ী রেকলেস ড্রাইভিংয়ে মৃত্যু ঘটানোর শাস্তির বিধান আছে। এই আইনে তার যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেটি আমরা চেষ্টা করব। 

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী একটি প্রাইভেটকারের বাঁ-পাশে আটকে রয়েছেন। পেছনে বাইকাররা চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বলছেন। কিন্তু গাড়িচালক দ্রুত গতিতে চালিয়েই যাচ্ছেন।

শেয়ার করুন