ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটির শেষ দিন গতকাল শনিবার। আজ রবিবার থেকে খুলছে সরকারি ও বেসরকারি অফিস । ফলে ছুটির শেষ দিনে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বাস টার্মিনালে। এমনই প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুক্রবার রাতে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোতে হাজারও যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। ট্রেনগুলো যখন ঢাকার রেলওয়ে স্টেশনে থামে, তখন দেখে মনে হয় জনসমুদ্র বহন করে আনছে ট্রেনগুলো। প্রত্যেকেই পরিবারের মায়া, ঈদের আনন্দ আর গ্রামের স্মৃতি বুকে নিয়ে ফিরছেন ঢাকায়। হাতে লাগেজ, চোখে ক্লান্তি, তবুও সামনে এগিয়ে চলার তাড়া যেন সবাইকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পরিবার ফেলে ফিরে আসার বেদনা সবার চোখেমুখে স্পষ্ট। তবে জীবিকার তাগিদে আবার ছুটে চলা ছাড়া উপায় নেই। এ দিকে শহর আবারও ফিরে পাচ্ছে তার চেনা গতি, কর্মচাঞ্চল্য আর ব্যস্ততা।
ট্রেন: গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে থামে আন্তঃনগর ‘একতা এক্সপ্রেস।’ ট্রেনটি শুক্রবার ৯টা ১০ মিনিটের দিকে দেশের সর্ব উত্তরের স্থান পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মের থামার সময় দেখা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিনের দুই পাশের রেলিং ধরেও বসে আছে মানুষ। যাত্রী আছে ট্রেনের ছাদেও।
এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছিল, বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনটি যখন থামে তখন প্রচুর বিনা টিকিটের মানুষ ট্রেনে উঠেছিল। অতিরিক্ত এসব মানুষের চাপে আসনধারী যাত্রীরা ঠিকভাবে উঠতে পারেননি ট্রেনে বসতে পারেননি দীর্ঘ সময় নিজ আসনে।
স্টেশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে যেসব ট্রেন ঢাকায় এসেছে প্রত্যেকটা ট্রেনেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী সংখ্যা ছিল। গতকাল দিনব্যাপী ঢাকায় আসা প্রত্যেকটা ট্রেনেই এমন ভিড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাস: রাজধানীর গাবতলীসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ফেরতযাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যাত্রীরা বলছেন, পুরো সড়কে খুব বেশি না হলেও তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যমুনা সেতুতে। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরার পথে যানজট খুব বেশি না থাকলেও রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। এসব রুটে ঢাকায় আসা যাত্রীরা বলছেন, টিকিটের জন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কর্মস্থলে ফিরতে আসা মানুষ বাস থেকে দল বেঁধে নামছেন। কিছু সময় পরপর বিভিন্ন জেলা থেকে বাস এসে পৌঁছাচ্ছে। অপর দিকে যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদেও ছিল একই চিত্র। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে, পশ্চিম অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করছে গণপরিবহন। প্রতিটি বাসই যাত্রীতে পূর্ণ। ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী বা সায়েদাবাদে বাস থেকে যাত্রীরা নেমে লোকাল পরিবহন, রিকশা, সিএনজিতে করে বাসায় ফিরছেন। সেজন্য রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলায় রয়েছে যানজট। তবে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে সায়েদাবাদ রোডে খুবই ধীর গতিতে পার হতে পারছে। তবে ঢাকায় নামার পর সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছেন গণপরিবহন পেতে। বাস কাউন্টারে নামার পর যাত্রীরা দেখছেন, রাজধানীতে চলাচল করা বাসের সংখ্যা খুবই কম। অনেক সময় বাস এলেও তা ছিল যাত্রীতে ঠাসা।
টানা ১০ দিনের ছুটি: গত ৭ জুন দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। ঈদের ছুটি উপলক্ষে গত ৪ জুন ছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস। দেশের সব গণমাধ্যমেও শেষ কর্মদিবস ছিল ঐ দিন। ৫ জুন থেকে শুরু হয় সংবাদকর্মীদের পাঁচ দিন আর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ১০ দিনের ছুটি। সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব গণমাধ্যমের ঈদের ছুটি শেষ হয় ৯ জুন। আর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি শেষ হচ্ছে ১৪ জুন।