২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন
বাগমারায় উকিলের মহুরী সাজেদুরের অপরাধ সাম্রাজ্য!
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৫
বাগমারায় উকিলের মহুরী সাজেদুরের অপরাধ সাম্রাজ্য!

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পিরোলি সেনোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুর রহমান, তার পিতা সাইফুল ইসলাম ও শ্বশুর মোজাফফর হোসেনের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, প্রতারণা ও চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তারা একটি সুপরিকল্পিত চক্র গড়ে তুলেছে—যার শিকার হয়েছেন প্রায় ২০০ জন সাধারণ মানুষ।


স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাজেদুর রহমান পেশায় একজন উকিলের মহুরী হলেও নিজেকে “দ্বিতীয় উকিল” পরিচয়ে পরিচিত করে প্রভাব খাটিয়ে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ডিপিএস (গোল্ডেন ডিপিএস) প্রকল্পের নামে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এখন সেই টাকা ফেরত না দিয়ে ভয়-ভীতি, হুমকি ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।


সজিব নামের একজন জানান, তার বাবা ২০১১ সালে সাজেদুরের পিতা সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে গোল্ডেন ডিপিএসে টাকা জমা দেন, কিন্তু সেখানে সই করানো হয় সাজেদুরের নামে। পাঁচ বছর ধরে টাকা দেওয়ার পর  টাকা ফেরত চাইলে হুমকি দেওয়া হয় ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হয়।


কালিগঞ্জ বাজারের নাইটগার্ড বেলাল অভিযোগ করেন, সাজেদুরের শ্বশুর ঝিকরা ইউনিয়নের গুনিয়াডাঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মোজাফ্ফরের বাড়ি পুলিশকে দেখিয়ে দেওয়ায় সাজেদুরের ক্যাডার বাহিনী তাকে মারধর করে। পরে এক লাখ টাকা দাবি করে না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।


একইভাবে জাহাঙ্গীর নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিনি সাজেদুরের শ্বশুরের কাছ থেকে ৭৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কিস্তিতে কিস্তিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এত টাকা শোধ করার পরও সাজেদুর ও তার শ্বশুরপক্ষের দাবির শেষ নেই। তাদের কাছে একখানা চেক থাকায় সেই চেকের অপব্যবহার করে জাহাঙ্গীরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।


কালিগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোহাগ অভিযোগ করেন, সাজেদুর তাকে মিথ্যা মামলার বাদী হতে চাপ দেন এবং বলেন, "সাক্ষী আমিই ম্যানেজ করব, মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে ভাগও দেব।" সোহাগ রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি দেওয়া হয় এবং ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।


গত১৮ জুন  সকালে উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজার এলাকায় অন্তত ১৫ জন ভুক্তভোগী প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন।


এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত সাজেদুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।


বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”


স্থানীয়দের দাবি, সাজেদুর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হবেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপেই এ ধরনের অপরাধচক্র রোধ সম্ভব।

শেয়ার করুন