কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আইনুন নাহার আনিতা (২৬) নামে এক তরুণীকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা মো. আমির হোসেন বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মেয়ের মা মোছা. তাসলিমা খাতুন বাদী হয়ে তার স্বামীকে প্রধান আসামি করে ভেড়ামারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
গত ১২ জুলাই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গত সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরের পর গ্রেপ্তার আমির হোসেনকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়। তিনি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
এলাকাবাসী ও ভেড়ামারা থানা সূত্রে জানা যায়, আনিতা তার দ্বিতীয় স্বামী মহিনের সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে বিগত তিন মাস ধরে বাবার বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু হঠাৎ আনিতা গত ১২ জুলাই মহিনের সংসারে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আমির হোসেন। রাগের বশে মেয়ের ব্যবহৃত ওড়না তার গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরবর্তীতে মেয়ের মা তাসলিমা খাতুন বাদী হয়ে আনিতার বাবা অর্থাৎ তার স্বামী আমির হোসেনকে প্রধান আসামি করে ভেড়ামারা থানায় হত্যা মামলা করেন।
বাদী তাসলিমা খাতুন বলেন, আমি আমার মেয়ের আড়াই বছরের বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম। মাগরিববের নামাজের ঠিক আগ মুহূর্তে বাড়িতে এসে আনিতাকে ডাকতে থাকি। পরবর্তীতে রুমে গিয়ে দেখি ওড়না প্যাচানো অবস্থায় আমার মেয়ের নিথর দেহ বিছানার ওপর পড়ে আছে। আমার স্বামী আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। তার শাস্তি চাই।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আমার স্বামী আমির হোসেন ব্যাপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। আমার বড় মেয়ে আইনুন নাহারকে (২৭) গত ৭/৮ বছর আগে স্থানীয় মওলাহাবাসপুর গ্রামের মো. প্রকাশের (৩৫) সঙ্গে মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ দেই। বিয়ের পর তাদের সাংসারিক জীবন ভালোভাবেই চলছিল। বিবাহের ৩/৪ বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে আমার বড় মেয়ে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে বখাটে ও মাদকাসক্ত মো. মহিনের (৩৫) সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক জড়িয়ে পড়ে এবং মো. মহিনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। মহিনকে বিয়ের পর থেকে মেয়ের সংসারে মহিনের অসংলগ্ন আচরণ, আয় উপর্জন না করা ও এলোমেলো চলাফেরা কারণে ঝগড়া-ঝাটি এবং অশান্তি লেগে থাকত। তাদের ওহী নামের তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান হয়। তাদের সাংসারিক জীবনে প্রায় সময় ঝগড়া ঝাটি লেগে থাকতো। এক পর্যায়ে আমি আমার বড় মেয়ে আইনুন নাহারকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। সে ও তার ছেলে আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে থাকতো।
গত ১২ জুলাই বিকেল অনুমানিক ৩টার দিকে রামচন্দ্রপুর গ্রামে আমাদের নিজ বসতবাড়িতে আমি, আমার স্বামী ও বড় মেয়ে আইনুন নাহার সকলে দুপুরের খাবার খাওয়া শেষে করি। এরপর বিকাল ৪টার দিকে মেয়ে আইনুন ও আমার স্বামী আমির হোসেন ব্যাপারীকে বাড়িতে রেখে বড় মেয়ের ছেলে ওহীকে সঙ্গে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে ছাগল চরাতে যাই। ৫টার দিকে বাড়িতে এসে দেখি শয়ন কক্ষে আমার মেয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ৭টার দিকে দেখি তার গলা ওড়না দিয়ে পেঁচানো ও ওড়নায় গিট দেওয়া। কোনো সাড়া-শব্দ নেই এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। দ্রুত ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আমাদের ধারণা আমার স্বামী আমির হোসেন ব্যাপারী বড় মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে মেয়ের সংসারে অশান্তির কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার বড় মেয়ে আইনুন নাহানের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে চিরতরে অশান্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ওড়না দিয়ে পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল রব তালুকদার বলেন, আমির হোসেন ব্যাপারীকে তার মেয়ে আইনুন নাহার আনিতাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছি। ভুক্তভোগীর মা নিজে বাদী হয়ে ৩০২ ধারায় তার স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।