দূর থেকে পাকিস্তানের বন্যাদুর্গত অঞ্চলগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় পুরো পাকিস্তানই এখন সাগর। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধু পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমের কাছে এ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৩। বন্যাপীড়িত এলাকাগুলোর মানুষেরা অতিবাহিত করছেন কঠিন মানবেতর জীবন। তাঁবু গেড়ে থাকা শিবিরগুলোতে দেখা দিয়েছে শৌচাগারের অভাব। যে কারণে খোলা জায়গায়ই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে দুর্গতদের। বাড়ছে পানিবাহিত মহামারির ঝুঁকি। তাছাড়া দেশটিতে সাম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক হারে গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেখা দিচ্ছে দুধ ও মাংসের ঘাটতি। ডন, জিও টিভি, দি নউিজ।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আপনি না দেখলে ধ্বংসের মাত্রা অনুমান করতে পারবেন না। যতদূর আপনার চোখ যাবে, দেখবেন শুধু পানি আর পানি। ঠিক যেন সমুদ্র।’ এ সময় তিনি জানান, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য ২ লাখ তাঁবু কিনবে সরকার। তাছাড়া পানি কমার পাশাপাশি পানিবাহিত রোগের আক্রমণকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন শাহবাজ। কিন্তু মুখে বললেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আশানুরূপ পদক্ষেপ নেই সরকারের। বিশেষ করে শৌচাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই যেন চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে শাহবাজ প্রশাসনের।
বন্যাবিধ্বস্ত পাঞ্জাবের একটি ছোট গ্রাম ফাজিলপুর। ‘বীরের মতো’ মাথা উঁচু করে আছে ছোট্ট জরাজীর্ণ এক রেলস্টেশন। এখানেই অস্থায়ী তাঁবু গেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন শত শত স্থানীয়। চারদিকে দিগন্তজোড়া থইথই পানি। রেল স্লিভারের পাশেই রয়েছে এখ খণ্ড শুকনো জমি। ওই জায়গাটুকুও এখন মানুষ এবং গবাদিপশুর মলমূত্রের একমাত্র ‘ভাগাড়’। দুর্গন্ধময় এই পরিবেশেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সারতে হচ্ছে প্রাকৃতিক কাজ।
এখানেই এখন চলছে বন্যাদুর্গতদের নাওয়া-খাওয়া। প্রাকৃতিক কাজ সারাদের একজন মাঝবয়েসি জেবুন্নেসা বিবি। দুই সপ্তাহ আগে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে জেবুন্নেসা বিবির গ্রামের বাড়িটি। নিরুপায় হয়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছেন এই রেললাইনের ধারে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাধ্য। গোসল বা টয়লেটে যাওয়ার জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই।’