গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ১৫০ আসনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা দেশের জন্য এক ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। জাতি এই দুঃসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।’
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে গণফোরাম আয়োজিত বিদ্যমান রাজনীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, ‘দেশ বর্তমানে এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-তেল, ডিজেলের মূল্য নিয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতা এবং লুটেরাদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে জনগণের অর্থনৈতিক দুরবস্থা আজ চরমে। সাধারণভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। খুন, হত্যা, গুম, ধর্ষণ এবং বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, মিথ্যা মামলা ইত্যাদি কারণে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের তহবিল রক্ষা করতে হবে। কর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে কৃষক-শ্রমিকদের অর্থ রক্ষা হচ্ছে না। ৩ হাজার কোটি টাকা টেলিফোন বিভাগ তহবিলে জমা দেয়নি। সবাই মিলে এই রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হবে।’
গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রে যারা দায়িত্বে আছেন তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। দেশের টাকা দুর্নীতি হয়ে পাচার হচ্ছে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের তহবিল রক্ষার পূর্ব শর্ত জনগণের ঐক্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় শক্তিশালী দলগুলো মাস্তান ও কালো টাকা ব্যবহার করে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা সাধারণ নাগরিকরা হচ্ছি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই আমরা এসব শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারি না বা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারি না। মাস্তান এবং কালো টাকার হাতে জিম্মিদশা থেকে আমরা নিজেদের মুক্ত করব, যাতে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রকৃত জাতীয় উন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নিতে পারি। এই জাতীয় উন্নয়নের কর্মসূচি মানবসম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও উন্নয়নে সাহায্য করবে। বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আগামীতে সবার নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। অন্যদিকে যেসব অশুভ শক্তি মাস্তান ও কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পুরো সমাজকে নিচের দিকে নামানোর চেষ্টা করছে, তারা পিছু হটে যাবে। আমরা জনগণের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করছি শুধু অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতেই নয়, তাদের পরাজিত করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র উপহার দিতে। এসব কালো শক্তির হাত থেকে, মাস্তান এবং কালো টাকার হাত থেকে আমাদের মুক্ত করার সবচেয়ে বড় সুযোগ হচ্ছে একটি সত্যিকারের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।’
সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল। সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও ডা. মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরামের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।