নাটোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই থেকে বিরত রাখতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থককে অপহরণের অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি (জিএম কাদের) গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রার্থী ড. মো. নুরন্নবী মৃধা। যাচাই-বাছাইকালে প্রস্তাবক ও সমর্থককে হাজির করতে না পারায় নুরন্নবী মৃধার মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায়।
জাপা প্রার্থী ড. নুরন্নবী মৃধা বলেন, তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। রোববার সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়। তার মনোনয়ন পত্রে প্রস্তাবক ছিলেন লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রজব আলী ও সমর্থনকারী ছিলেন একই ইউপির ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জামসেদ আলম।
রজব ও জমসেদ আলী রোববার সকালে যাচাই-বাছাইকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নির্ধারিত সময় তারা সেখানে আসেননি। তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুসারীরা তাদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করে ইউপি সদস্য রজব আলীকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে গেছেন।
এসময় তাকে আটকে রেখে একটি হলফনামায় এই মর্মে স্বাক্ষর নিয়েছেন যে, রজব আলী সাধারন সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নুরন্নবী মৃধার মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করেছেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নয়। এ ঘটনায় রজবের পরিবার লালপুর থানায় অভিযোগ করেছে।
ড. মো. নুন্নবী মৃধা বলেন, তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে আমার প্রস্তাবককে অপহরণ করে আটকে রেখে আমার মনেনয়নের বৈধতা নষ্ট করেছেন। একই কায়দায় অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রায়হান শেখের মনোনয়নও বাতিল করা হয়েছে। আমার মনোনয়ন যেন বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা না করা হয়, নির্বাচন কমিশনের কাছে সেই দাবী করছি।
জাপা প্রার্থী ড. মোঃ নুরন্নবী মৃধা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রতিপক্ষের কথা বললেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম উচ্চারন করেননি।
ড. নুরন্নবী মৃধার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার পর বলেন, তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি প্রতিপক্ষের কথা বললেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম নেননি।
তবে অভিযোগের জবাব দিতে রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাজেদুর রহমান খান সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে জাপা প্রার্থীর এমন অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করা হয়।
লালপুর থানার ওসি মনোয়ারুজ্জামান বলেন, কোন ইউপি সদস্যকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।
এদিকে রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাজেদুর রহমান খানকে পাশে বসিয়ে রেখে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, নূরন্নবী মৃধা সংবাদ সম্মেলনে যেসব অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জাপা প্রার্থীর কোন প্রস্তাবক ও সমর্থনকারীকে অপহরণ বা আটক করা হয়নি।
তারা নিজেরাই রিটার্নিং অফিসারের কাছে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, তাদের ভুল বুঝিয়ে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তারা তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, প্রার্থী ড. নূরন্নবী মৃধা তার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি। যাচাই-বাছাইকালে তিনি তার প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী দুই দফায় তার কার্যালয়ে এসে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, ভুল বুঝিয়ে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
তাই নিয়ম অনুযায়ী ড. নূরন্নবী মৃধার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। একই কারনে অপর প্রার্থী রায়হান শাহর প্রার্থীতাও বাতিল করা হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে তারা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) কার্যালয়ে আপিল করতে পারবেন।