আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের সঙ্গে থাকে, সেই দলের নেতাকর্মীরা কখনও পালায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আজকে আমি জানি, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদের আবার নোটিশ দেয়। আবার বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আমি এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না।
তিনি বলেন, আজকে যারা বলে, পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এমনকি আমি, ওই জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম।
রোববার বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় ১৯৭৫ পরবর্তী সময় এবং ২০০৭ সালের পর দেশে ফেরার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরূপ পরিস্থিতিতেও আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম শুধু দেশের মানুষের কথা ভেবে, দেশের মানুষের সেবা করার জন্য।”
এ সময় তিনি বিএনপি নেতাদের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, “তারা নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? যে নাকি দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যে নাকি ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাস্পে রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল। সেই কথা কী আমাদের বিএনপি নেতাদের মনে নাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। এমনকি খালেদা জিয়া তারেক-কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি তাদের পাচার করা টাকা। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে।
বেলা ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে হেলিকপ্টারে করে নগরীর জেলখানা প্রশিক্ষণ মাঠে নেমে গাড়িতে করে সভামঞ্চে আসেন। তখন ময়দান ভর্তি জনতা হাততালি ও গগনবিদারি স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতার প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
মাদ্রাসা মাঠে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জন্য করা এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তখনো আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। তার বাচ্চা হয়েছিল, অপারেশন হয়েছিল, তাকে দেখতে। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস আমি মোকাবিলা করবো। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ৪০ ভাগ যেখানে দারিদ্র্যসীমা, আমরা ২০ ভাগে নামিয়েছি,’ বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। এই রাজশাহীর অবস্থা কী ছিল আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়, প্রতিনিয়ত হত্যা-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন; এই রাজশাহীতে মহিমা, রাজুফা…কীভাবে তাদের ওপর পাশসিক অত্যাচার করেছে ওই বিএনপির ক্যাডার বাহিনী, জামায়াত জোট! একটা বাচ্চা মেয়েকে গ্যাং রেইপ করা হলো, তার বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল সেই কারণে।
দলীয় প্রধান বলেন, নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন না হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে তোদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন পেত না। এটা তারা ভুলে যায়। আর দেশ স্বাধীন না হলে কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারতো না খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতো না। সেই নৌকার ওপর এত রাগ কেন!
নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে খাদ্যে নিরাপত্তা পেয়েছে। ১ দিনে ১০০ সেতু, ১ দিনে ১০০ সড়ক কোন সরকার করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগ সরকার, নৌকা মার্কার সরকার। সেই করতে পারে, আর কেউ করতে পারে না বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তারপর চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশকে উন্নত করতে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়নি। চিন্তাও করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।
তিনি আরো বলেন, এই রাজশাহীতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর কলকারখানা করে দেন। এরপর সব বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ বন্ধ কারখানা চালু করতে কাজ করে। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাঁধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দেই। এই রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরইমধ্যে রাজশাহীর মানুষের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এছাড়াও জনসভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী-১ (সদর) আসনের এমপি ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ।
জনসভা উপস্থাপনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা।