১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:৩১:৪১ অপরাহ্ন
জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদে ফেরাতে ৬১ কাউন্সিলরের আবেদন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৩
জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদে ফেরাতে ৬১ কাউন্সিলরের আবেদন

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন এই সিটির ৬১ কাউন্সিলর।  

রোববার দুপুরে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে এ চিঠি জমা দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সোমবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ৬১ জন কাউন্সিলর আমাকে মেয়র পদে পুনর্বহাল করার দাবিতে আবেদন করেছেন। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আমাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। নির্বাচিত মেয়রের অবর্তমানে নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই কাউন্সিলররা স্ব-উদ্যোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এই আবেদন করেছেন।   
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গাজীপুর সিটির ৬১ কাউন্সিলরের স্বাক্ষরিত দরখাস্তের একটি অনুলিপি যুগান্তরের এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌছেছে। 

আবেদনে কাউন্সিলররা লিখেছেন, গাজীপুরের উন্নয়ন ও আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়রের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন।

এতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচিত মেয়র নগরীর কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। কিন্তু বিগত ১৫ মাসে প্যানেল মেয়রের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতা চরম পর্যায়ে পৌছেছে। যার কারণে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। 

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সিটি কর্পোরেশনে উন্নয়নের যে ধারা চালু করেছিলেন বর্তমান প্যানেল মেয়রের সমন্বয়হীনতা ও জনগণের চেয়ে নিজের উন্নয়নে অধিক মনোযোগী হওয়ার কারণে আজ তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর কারণে লাখ লাখ সাধারণ জনগণ সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রাপ্য নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কার্যত সিটি কর্পোরেশন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে সরকার ও দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। 
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে হাইকোর্ট প্যানেল মেয়রের (আসাদুর রহমান কিরণ) বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, দ্বৈত নাগরিকতাসহ ২১টি বিষয়ে রিট দায়ের হয়েছে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দুদদকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

এমতাবস্থায় কাউন্সিলররা নগরীর উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে জাহাঙ্গীরকে মেয়রের দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।   

প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। 

জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নগরবাসী। তারা বলেন, কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে সংগঠন শক্তিশালী হবে এবং তিনি পুনরায় মেয়রের দায়িত্ব পেলে গাজীপুর সিটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

এরপর গত ২১ ডিসেম্বর গাজীপুরের মৌচাকে জাতীয় যুব রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক ক্যাম্পের অনুষ্ঠানে আসা এলজিআরডি মন্ত্রীকে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। 

মন্ত্রী তখন বলেছিলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। তাকে তো মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত যেসব কারণে করা হয়েছে, সেগুলো প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয। ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও দলে ফিরতে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। যার ফলশ্রুতিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন