১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৬:০৯ পূর্বাহ্ন
দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার প্রধানম
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৩
দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার প্রধানম

মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকাল রবিবার জাতি উদযাপন করেছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের চেতনায় দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় উচ্চারিত হয়েছে দেশজুড়ে। 

একাত্তরের গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার দাবিও জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে এক বার্তায় দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।

গতকাল ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দেশের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সূচনা হয়। ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির ছয়টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি স্যালুট প্রদর্শন করে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।

শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আরো একবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদ উপনেতা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

এরপর একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদসচিব, তিন বাহিনীর প্রধানরা, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। 
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।

গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও ঢাকা মহানগরীতে দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সাজানো হয়। এ দিবসে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতারে প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান ও ক্রোড়পত্র। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতকায় সজ্জিত করা হয়। ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদকদল বাদ্য পরিবেশন করে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করে। 

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করা হলে বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ভিড়। তবে রমজান মাসের কারণে আগের তুলনায় ভিড় কিছুটা কম ছিল। এর পরও শহীদবেদি ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। লাল-সবুজের পতাকায় ছেয়ে যায় সৌধ প্রাঙ্গণ। সবার হাতে ছিল ফুল। পোশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া।

এ সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সব বয়সী মানুষকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে একে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, গণফোরাম, জাসদ, বাম দলসহ বিভিন্ন দলের পক্ষে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা প্রতি নিবেদন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা এবং শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষও এসেছিল। সবার চোখেমুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা বিনির্মাণের অবিচল আস্থার ছাপ। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধ ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছে উত্সবের নগরীতে। 

গাজীপুর থেকে আসা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু যাঁরা যুদ্ধ করেছেন, দিয়েছেন দেশের জন্য প্রাণ, তাদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা প্রয়োজন। তাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমি এখানে প্রতিবারই আসি।’

স্মৃতিসৌধ এলাকায় ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নিরাপত্তার কঠোর ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরাসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি রাখা হয়।

বিভিন্ন দলের নেতারা যা বললেন : স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার। তিনি এ সময় গণহত্যা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতার এই মহান দিনে আমরা শপথ গ্রহণ করছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব। দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’ 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে অল্পসংখ্যক মানুষ ধনসম্পদের মালিক হয়েছে। অন্যদিকে যারা সম্পদ সৃষ্টি করে তাদের জীবন আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের যে অর্থ পাচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

রাজধানীতে কর্মসূচি : ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাবাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এবং এর আশপাশের সড়কগুলোতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের সড়কে জমায়েত হতে থাকে।

সকাল ১০টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

রাজারবাগে সশস্ত্র সালাম : সকাল সাড়ে ৮টায় মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদ পুলিশ সদস্যদের সম্মানে রাজারবাগে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ডিএমপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এসবি) মো. মনিরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্কের নেতারা। এ ছাড়া পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী। এর আগে ডিএমপির একদল চৌকস পুলিশ সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সশস্ত্র সালাম প্রদান করেন। সেই সঙ্গে বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর।

শেয়ার করুন