পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ঋণ পাবে বিনিয়োগকারীরা। মন্দা পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। তারল্য সঙ্কট দূর করার জন্য কাজ করছে সংস্থাটি। এবার পুঁজিবাজারে তারল্য সাপোর্ট দিতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল বা সিএমএসএফ ফান্ডকে কাজে লাগাতে চায় সংস্থাটি। এই ফান্ড থেকে ঋণ নিতে পারবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিএসইসির সর্বশেষ কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায় এই ফান্ড থেকে সবাইকে গণহারে ঋণ দিবে না। কিছু শর্ত পরিপালন করতে পারলেই সিএমএসএফ থেকে ঋণ নিতে পারবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। একই সাথে এই ঋণের টাকা যে কোনো শেয়ারেও বিনিয়োগ করতে পারবে না। শিগগির এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হবে।
কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে ২০২১ সালে ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল’ বা সিএমএসএফ ফান্ড গঠন করে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। ফান্ডটিকে কার্যকর করার জন্য তিন বছরের অধিক সময়ের জন্য অদাবিকৃত বা অবণ্টনকৃত নগদ বা স্টক লভ্যাংশের উপর ভিত্তি করে সিএমএসএফ গঠন করে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশে দেশের সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির মাধ্যমে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতেই এই অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাজার স্থিতিশীলতায় সিএমএসএফ ‘আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড’ নামে একটি ক্লোজড-অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করেছে। এই ফান্ডের আকার ১০০ কোটি টাকা, যার ইউনিট প্রতি অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। সিএমএসএফ স্পন্সর হিসেবে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি নিষ্পত্তির জন্য মোট ২২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার অমীমাংসিত দাবি নিষ্পত্তির আবেদন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২১ লাখ ৩৩ হাজার টাকার দাবি নিষ্পত্তি করেছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করবে বিএসইসি।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, বাজারে বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিএসইসির এই মহূর্তের উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। এর ফলে মানুষ বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। তবে শর্তগুলো যাতে এমন না হয়, যাতে মানুষ বিনিয়োগ নিতে অনাগ্রহী হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বাজারকে গতিশীল করতে হলে তারল্য সাপোর্টের বিকল্প নেই। বিএসইসি যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। বিএসইসির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
এ দিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন দ্বিগুণ বেশি হয়েছে। সূচক পতনের একই অবস্থা অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন ১ দশমিক ৭৯ গুণ বেশি হয়েছে। উভয় স্টকে বেড়েছে বিক্রেতার চাপ। এর আগের দিনেও শেয়ারবাজার পতনমুখী ছিল।
গতকাল ডিএসইতে ২৭৭ কোটি ৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার। এ দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৯৩ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৭০ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৪ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২১০ দশমিক ৭০ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৪৫ দশমিক ৬২ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৮টি এবং কমেছে ৫৬টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২০১টির। ডিএসইতে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। ইস্টার্ন হাউজিং ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেল ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, আরডি ফুড ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ১২ কোটি ৯ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, শাইনপুকুর ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, আলহাজ টেক্সটাইল ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং আমরা নেটওয়ার্ক ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবসে ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১০১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৯টি, কমেছে ৩৪টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৪৮টির।
গতকাল সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৬ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৭৯ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৩ দশমিক ৮১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৫ দশমিক ৫১ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ২৮ দশমিক ১৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই ৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩১৪ দশমিক ১৮ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৩৯ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৯৫৮ দশমিক ২৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৪৭ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে।
গতকাল সিএসইতে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। মিডল্যান্ড ব্যাংক ১ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেল ২৬ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৫ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ২০ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ১৯ লাখ টাকা, এডিএন টেলিকম ১৭ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ১৬ লাখ টাকা, লিন্ডে বাংলাদেশ ১৩ লাখ টাকা, বসুন্ধরা পেপার ১২ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।