ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাহিনীর মধ্যে চলছে তুমুল যুদ্ধ। রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধে এখনো লড়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। সেখানে ইউক্রেনের বাহিনীকে গোলা ছুড়ে সহায়তা করতে এখনো ১৭তম ট্যাংক ব্যাটালিয়নের ডাক পড়ছে।
এই শহরের বেশিরভাগ এলাকার দখল এখন রাশিয়ার কাছে। বেসরকারি ওয়াগনার বাহিনী শহরের পূর্ণ দখল নিতে কয়েক মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তাদেরও বেশ মূল্য দিতে হচ্ছে। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিনিধি জনাথন বিল বাখমুতে কথা বলেন গ্রাদের কমান্ডার ভলোদিমিরের সঙ্গে। সেখানে অস্ত্রের ঘাটতির কথা বলেন ভলোদিমির। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন গাছের সারির আড়ালে অপেক্ষা করছি, তখন আমার কাছে একটি কল আসে। অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি রুশ মর্টার বাংকার রয়েছে। সেটি লক্ষ্য করে রকেট লঞ্চার থেকে গোলা ছুড়তে হবে।’
ইউনিটের সদস্যরা ডালপালা সরিয়ে রকেট লঞ্চার নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে খালি মাঠে দ্রুত কাজ শুরু করেন। তারা ব্যারেলগুলোকে যখন লক্ষ্যবস্তুর দিকে তাক করলেন, তখন ইউক্রেনীয় একটি ড্রোন ওপর থেকে নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুর বিষয় ঠিক করে দিল।
ভলোদিমির বলেন, তাদের বলা হলো— তাদের প্রথম রকেটটি লক্ষ্যবস্তু থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে গিয়ে পড়েছে। এর পর তারা উচ্চতা ঠিক করে আরও দুটি গোলা ছুড়ে দ্রুত গাছের আড়ালে চলে আসেন। এর পর খবর এলো— এবার তারা ঠিকভাবে আঘাত হানতে পেরেছেন।
কিন্তু ভলোদিমির এখন খুবই হতাশ। কারণ এভাবে বেশি দিন আর চালাতে পারবেন না। অস্ত্রের ঘাটতির কথা জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেসব সেনা এখানে মারা যাচ্ছে, আমরা তাদের আরও বেশি সহায়তা করতে পারতাম।’
ভলোদিমির বলেন, ইউক্রেন ইতোমধ্যে গোলাবারুদের মজুত শেষ করে ফেলেছে। ফলে অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া ও পাকিস্তান থেকে সহায়তা পাচ্ছেন। তবে পাকিস্তানের তৈরি রকেটের মান ভালো নয়।
যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদের চেয়ে মিত্রদের প্রতি ইউক্রেন ততটা জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছে। এখন তাদের মূল মনোযোগ হলো— বড় ধরনের আক্রমণ চালানো। একই সময়ে তাদের নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত বিপুল গোলাবারুদ ব্যয় করতে হচ্ছে।
পশ্চিমাবিশ্ব থেকে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানসহ সম্প্রতি আধুনিক অস্ত্র এলেও ইউক্রেন মূলত তাদের সোভিয়েত আমলের পুরনো অস্ত্রাগারের ওপরই বেশি নির্ভরশীল।
রাশিয়ার তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বুক এখনো তাদের কাছে অনেক মূল্যবান হাতিয়ার। এটি বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।
এই অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে আকাশসীমায় রাশিয়াকে ঠেকানো যাচ্ছে। গম্বুজ আকৃতির রাডারসহ দীর্ঘকায় এই যানটিকে ছদ্মবেশে ঢেকে গভীর পরিখায় রাখা হয়েছে। এর ওপরের দিকে দুটি ধূসর বর্ণের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সাধারণত এটি চারটি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে।
বুকের কমান্ডার জোসেফের কাছে বিবিসির এই প্রতিবেদক বুক ক্ষেপণাস্ত্রের তীব্র ঘাটতির বিষয়টি সঠিক কিনা জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে জোসেফ জোর দিয়ে বলেন, ‘না, এটা সত্য নয়।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, বুকের রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ছে। ইউক্রেনের আরও বুক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন।
জোসেফ বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র নেই।’ অনেক সময় এগুলোর যন্ত্রাংশ ভেঙে যায় এবং আমাদের কাছে এর খুচরা যন্ত্রাংশ নেই। কারণ ইউক্রেনে এসব যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। ইউক্রেনের কারখানায় এসব যন্ত্রাংশ তৈরি হয় না।’