চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশার কথা হলো রাজশাহী অঞ্চলের বাইরেও পাহাড় ঘিরে আমের নতুন সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। তিন পার্বত্য অঞ্চলে এবার ৩ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, রংপুর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় আরও ৯ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার আমের ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা। তারা বলছেন, ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারজাত শুরু করেছেন তারা। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা ও রাঙামাটির বিভিন্ন বাগান থেকে নামছে আম। খাঁচি ভরে আম তোলা হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। সেখান থেকে এসব আম যাচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আম রফতানি হবে বিদেশেও। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আম পরিপক্ব হতে একটু বেশি সময় লাগছে। কোনো কোনো জাতের আম পরিপক্ব হতে এখনো দুই সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে এবার আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। ব্যুরো ও প্রতিনিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর এক হাজার কোটি টাকার মতো আমের বাণিজ্য হয়। এটি এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। জেলায় গত মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। এটি চলতি মৌসুমে বেড়ে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পাকে। এজন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছে। এ জেলায় এবার ২২৫ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। রাঙামাটিতে এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার তিন হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সে অনুযায়ী চাষও হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টরে ১২ টন। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলায় বর্তমান সর্বনিু বাজারদরে ২০০ কোটি টাকার অধিক আম বিক্রি হবে। এখন বাজারে আসছে দেশি জাতের আম। আম্রপালি, রুপালি, ফজলি, ল্যাংড়া, রাঙ্গুয়াই জাতের আম এখনও পাকেনি। রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, এছাহাক, ছাইবুদ্দিন, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, কলিকাতা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালি, সাদারুচিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে।
এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙ্গার। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর ২২০-২৫০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা তাদের। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ২৪শ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। মেহেরপুরে গেল বছর প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির আম বাগান থেকে ৪০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে জেলা কৃষি বিভাগের। কৃষি বিভাগ আশা করছে, জেলায় এবার ১৬০০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হবে। ঠাকুরগাঁওয়েও এবার আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া আম ২৫ কোটি টাকা বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর। নওগাঁয় এ বছর আমের ভালো ফলন হয়েছে। আগামী ২২ মে থেকে আম সংগ্রহ শুরু করবে চাষিরা। এবার জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। খাগড়াছড়িতে ছোট-বড় আম বাগানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আর এ খাতে জড়িত অন্তত ২০ হাজার মানুষ। আম উৎপাদনের ‘নতুন রাজধানী’ এখন এ জেলা। চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এ জেলায় এবার ২২৭৫ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে। বান্দরবানের পাহাড়েও আমের ফলনে বাজিমাত করেছেন চাষিরা। এ জেলায় ৫৬০ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। রাঙামাটিতে এবার ২শ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মেহেরপুরে ১৬শ কোটি, নাটোরে ২৩৯ কোটি, রংপুরে ২৫০ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।