ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বাংলাদেশের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা জোসেপ বোরেলকে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে অনুরোধ করছি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে হবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত করে চলমান সংকটের টেকসই এবং গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে আহব্বান জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে ইইউ ঢাকা অফিসের একজন মুখপাত্র যুগান্তরকে বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়জন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম যুগান্তরের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যার কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে, তিনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। ফলে বিষয়টি নিয়ে কীভাবে মন্তব্য করবো?
১২ জুন এই পত্র প্রেরণকারী ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ছয় সদস্য হলেন, স্লোভাক প্রজাতন্ত্রেও ইভান স্টেফানেক, চেক প্রজাতন্ত্রের মাইকেলা সোজড্রোভা, বুলগেরিয়ার আন্দ্রে কোভাতচেভ, ডেনমার্কের কারেন মেলচিওর, স্পেনের জাভিয়ের নার্ট এবং ফিনল্যান্ডের হেইডি হাউটালা।
চিঠিতে তারা বলেন, আমরা সেখানে আসন্ন ১২ তম সাধারণ নির্বাচনের উপর ফোকাস করার গুরুত্বের উপর জোর দিতে চাই, যা ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের শুরুতে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জনগণের তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার এখনো বাকি। কারণ, দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা একটা সমস্যা যেহেতু কারচুপি, কারসাজি এবং ভোটারদের অনুপস্থিতি ১০ ও ১১তম সংসদ নির্বাচনকে বিঘিœত করেছে।
যদিও দশম সাধারণ নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক ছিল না এবং ১১তম সংসদ নির্বাচন (মধ্যরাতের নির্বাচন নামে পরিচিত) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করেছে।
ফলস্বরূপ, সরকারের কাছে বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে কোনো বা সামান্য ম্যান্ডেট ছিল না এবং তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুমোদন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
সুতরাং, ইইউকে শুধু বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সাথে মানবাধিকার বিষয়ে অবিরাম সংলাপে বসে থাকলেই হবে না
বাস্তব ফলাফলে কাজ করতে হবে। সম্ভাব্য ব্যবস্থা যেমন মানবাধিকারের জন্য দায়ী এবং জড়িতদের ইইএ জোনে প্রবেশের সীমাবদ্ধতা অথবা জিএসপি+ প্রণোদনার শর্তের নিয়মিত স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
চিঠিতে তারা বাংলাদেশে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এই চিঠির মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে চাই এবং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই।
চিঠিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকার যারা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় তারা নাগরিকদের জন্য গণতান্ত্রিক স্থান হ্রাস করেছে এবং সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা তাদের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর। মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হয়েছে বিশেষ কওে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে।
আরও বলা হয়, হেফাজতে নির্যাতন এবং অন্যান্য দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলি প্রায়শই সংযুক্ত ছিল বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিষয়ে। অপব্যবহার শুধুমাত্র সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও একইরকম ছিল।
গত এক দশকে বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদন্ড এবং জোরপূর্বক গুমের উচ্চ হার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ইউএন কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার (সিএটি)সহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্বেগ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) অনুমোদনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বলপূর্বক গুম থেকে থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য।
উপরোক্ত বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা ইইউ নেতৃত্বের পুনরাবৃত্তি করতে চাই বিশ্বজুড়ে কূটনীতি, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে। এবং এর ফলে আমরা বিশ্বাস করি ইইউ বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জোরালো কারণ রয়েছে। কারণ দেশটি আমাদের দীর্ঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতার অংশীদার।