১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৬:১৪ অপরাহ্ন
রাসিক নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবি সুজনের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৬-২০২৩
রাসিক নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবি সুজনের

 রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন (রাসিক) সুষ্ঠু করার আহ্বান জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।


শনিবার (১৭জুন) সকালে মহানগরীর একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন।


সংবাদ সম্মেলনে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দীলিপ কুমার সরকার লিখিত বক্তব্য উল্লেখ করেন, সরাসরি দেশ শাসন বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনা প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় না। তারা এই কাজটি সম্পন্ন করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে। আর এই জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের পদ্ধতিই হচ্ছে নির্বাচন। এই বাছাই প্রক্রিয়া যদি সঠিক হয়, তবে একথা বলা যায় যে, রাষ্ট্রের মালিকরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্র বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনা করছে। আর যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধি নির্বাচিত না হন, তবে সেকথা বলার সুযোগ থাকে না।


তাই, জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তথা সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একটি নির্বাচন পরিচালনার মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকলেও এতে অনেক অংশীজন (স্টেক হোল্ডার) সংশ্লিষ্ট থাকে। একটি নির্বাচন তখনই অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু হয়, যখন সকল অংশীজন স্ব স্ব অবস্থানে থেকে স্ব স্ব ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে। তাই সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ‘সুজন’-উদাত্ত আহ্বান জানান।


নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান:

* অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

* সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভালো দৃষ্টান্তসমূহ অনুসরণ করুন।

* সকল দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন।

* প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করুন।

* কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করুন। কেউ নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যাতে তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ না করেন, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।

* নির্বাচনে কোনো এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে সেই এলাকার নির্বাচন স্থগিত করুন এবং প্রয়োজনে ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোট গ্রহণ করুন।


সরকারের প্রতি আহ্বান:

* সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন।

* নির্বাচনের সাথে সংশ্লি¬ষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কোনোভাবেই কোনো দলের পক্ষে প্রভাবিত করবেন না।

* নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এই বার্তা দিন যে, সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।


রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান:

* যে কোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন। ‘আমরা বিজয়ী হবোই’ এই ধরনের বক্তব্য না দিয়ে, গণরায় মাথা পেতে নেয়ার ঘোষণা দিন।

* দলের মনোনীত বা সমর্থিত প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে তাদের নির্দেশনা দিন।

* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।


মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান:

* নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন।

* আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন।

* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।


নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান:

* নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন।

* কোনো বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে বা কোনো দলের অনুগত হয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

* ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সৃষ্টিকারীদের পুলিশে সোপর্দ করুন।

* অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের আওতার বাইরে গেলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করুন।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান:

* যথাযথভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন।

* পক্ষপাতমূলক আচরণ বা দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

* রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেফতার থেকে বিরত থাকুন।

* আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।


গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান:

* নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করুন।

* প্রার্থীদের স¤পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।

* নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার করুন।

* অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য প্রার্থী বা অন্য কাউকে সতর্ক করা হলে অথবা জরিমানা বা অন্য কোনো ধরনের শাস্তি প্রদান করা হলে তা ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার করুন।


প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান:

* নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন।

* অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ভোট ক্রয় থেকে বিরত থাকুন ।

* ভোটার বা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন বা কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন।

* নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন এবং যে কোনো ধরনের ফলাফল স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার ঘোষণা দিন।


সচেতন নাগরিকদের প্রতি:

* অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলেই যেন স্ব স্ব অবস্থানে থেকে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেন, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করুন।

* সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের পক্ষে আওয়াজ তুলুন এবং এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন, যাতে তাঁরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।


ভোটারদের প্রতি আহ্বান:

* ভোট প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন।

* অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।

* দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালো টাকার মালিক অর্থাৎ কোন অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।


সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সুজনের রাজশাহী মহানগর সভাপতি পিয়ার বকস, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও জেলার সভাপতি সফিউদ্দীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম মাসুদ ও সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান।

শেয়ার করুন