এটা এমন এক বিষয়, যার স্বপ্ন থাকে অনেক দম্পতিরই। তবে এটা করে দেখাতে পারেন কম মানুষই। ম্যাট প্রায়র ও লিয়া প্রায়র তাঁদের চাকরি ছেড়েছেন, বেচে দিলেন সব সহায়সম্পত্তি। তারপর দুই শিশুসন্তান তিন বছরের জ্যাক আর এক বছরের শার্লেটকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বিশ্বভ্রমণে। এ মাসের অর্থাৎ জুলাইয়ের ১৫ তারিখে শুরু হয়েছে তাঁদের ভ্রমণ।
অবশ্য এই দম্পতির ডিএনএতেই আছে ভ্রমণের নেশা। ২০১১ সালে লাওসে তাঁদের প্রথম দেখা হয়। ম্যাট তখন একটা লন্ডন ব্ল্যাক ক্লাব গাড়ি চালিয়ে বিশ্ব ঘুরে ব্রিটিশ রেডক্রসের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে লিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক বছর শিক্ষকতা করে এক বছরের বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।
ম্যাট যেহেতু গাড়ি নিয়ে ভ্রমণে আছেন, তাই দূর থেকেই যোগাযোগ থাকে দুজনের। এক বছর পর হংকংয়ে এসে একসঙ্গে জীবন শুরু করলেন তাঁরা। নিজের ভ্রমণের সময় ম্যাটের পরিচয় হয় জাপদের সঙ্গে, যারা ১৯২৮ মডেলের একটি ক্ল্যাসিক গাড়িতে ২২ বছর ধরে বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন। এই ভ্রমণের সময় তাঁদের চার সন্তান হয়।
‘লিয়া আর আমার দেখা হওয়ার পরে জাপদের ভ্রমণের কথা বলেছিলাম। তখনই বীজটা রোপিত হয়। ভাবছিলাম, হয়তো আমরাও এ রকম একটা কিছু করব।’ সিএনএনকে বলেন ম্যাট প্রায়র।
যাত্রা হলো শুরু
তাঁদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে এখন। লন্ডন থেকে একটি ইনিয়েস গ্রেনেডিয়ার ফোর হুইলার গাড়িতে যাত্রা শুরু হয়েছে তাঁদের। এর সঙ্গে জোড়া লাগানো আছে প্যাট্রিয়ট কমপ্লেক্স এক্স-৩ নামের একটি ট্রেইলার। আগামী পাঁচ বছরে শতাধিক দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা তাঁদের। পথে বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক ও সংরক্ষিত অঞ্চলে থামবেন এবং পরিবেশগত ও সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগে সাহায্য করবেন। কাজ করবেন জীববৈচিত্র্য নিয়েও।
যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে তাঁরা পেরোবেন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। তারপর মধ্য এশিয়া, চীন, হিমালয় অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা হয়ে ভ্রমণ করবেন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা।
এই ভ্রমণে ‘প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ’ নামের নিজেদের একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করবেন। ভ্রমণের সময় ন্যাশনাল পার্কের বিভিন্ন রেঞ্জার, সহায়তাকরী সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তা×দের দেখা হবে। তাঁদের গল্প নিজেদের ওয়েবসাইটে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরবেন এর মাধ্যমে।
‘বাচ্চাদের স্কুল শুরুর আগেই আমাদের হাতে চমৎকার একটা সময় আছে। রোমাঞ্চকর একটা কিছু করার এটাই উপযুক্ত সময়।’ বলেন ম্যাট। ভ্রমণটিতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করেন ম্যাট।
প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ
হংকংয়ে ফিরে পরের একটা দশক ব্যস্ত সড়কে বাস করলেন প্রায়ররা। আমেরিকান নাগরিক লিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করার পাশাপাশি হংকংয়ে এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। অবশ্য ব্রিটিশ নাগরিক ম্যাট এ সময়টায় অনেক কিছুই করলেন। এর মধ্যে আছে বিমান চালনা, একটি রোমাঞ্চ ঘরানার ট্রাভেল কোম্পানির সহ-উদ্যোক্তা, হংকং এক্সপ্লোরারস ক্লাবের পরিচালকের দায়িত্ব পালন ইত্যাদি।
২০১৯ সালে হংকং শহরে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে একটি অরগানিক খামার করার কথা ভাবলেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দম্পতিকে হংকংয়ে আটতে যেতে হলো। এর মধ্যে তাঁদের ছেলে জ্যাকের জন্ম হলো।
২০২২ সালেও হংকংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় আবার অন্তঃসত্ত্বা লিয়া সাময়িকভাবে পাড়ি জমালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তখন হংকংয়ে থাকলেও তাঁদের মেয়ে শার্লেট জন্মানোর সময় অবশ্য স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন।