১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:১৮:২৯ অপরাহ্ন
৪৫ পরিবারের ভাঙন ঠেকাতে ব্যতিক্রমী রায়
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৬-২০২২
৪৫ পরিবারের ভাঙন ঠেকাতে ব্যতিক্রমী রায়

আপস মীমাংসা সূত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে ৪৫টি পরিবারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে ব্যতিক্রমী রায় দিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। 

বুধবার দুপুরে এ রায় দেন তিনি। পাঁচ শর্তের ওপর ৪৫ দম্পতিকে সাজার বদলে আদালতের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়। 

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বামী-স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার ও ধর্ম পালন, সংসারে শান্তি নষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে উভয়কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া, স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি না করা, পরিবারের যেকোনো সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করা ও স্ত্রীকে কখনো নির্যাতন না করা।

যৌতুকসহ নানাবিধ কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত ৪৫ নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। 

আদালত সূত্র জানায়, বিচারক উভয়ের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানদের এবং তাদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন এটে ৪৫টি যুগলকে তাদের পারিবারিক মহামিলনের ব্যবস্থা করে তাদের মামলা নিষ্পত্তি করে দেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে সন্তানাদি নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চিত এক জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্ধকার জীবন থেকে স্ত্রীকে স্বামীর এবং সন্তানদের তাদের বাবার পারিবারিক বলয়ে আবদ্ধ করার উদ্দেশ্য এমন রায় দেন বিচারক।

আদালত এসব রায়ের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আইন-আদালত সৃষ্টি হয়েছে মানুষকে শুধু শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। মানষের এ ধারণাকে পাল্টে দেওয়ার জন্য আজকের এ রায়। আদালত যে শুধু শাস্তিই দেন না মানুষের মধ্যে শান্তির সুবাতাস দেয়, সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দেয় এ রায়ের মাধ্যমে মানুষ সেটা অনুধাবন করতে পারবে।

রায়ে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় খুশি ও সন্তুষ্টি জানিয়ে দম্পতিরা জানান, সংসারের নানা বিষয় নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, যৌতুক দাবি কিংবা স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচরণসহ নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোর্টে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছিল। স্বামী-স্ত্রীর এসব দ্বন্দ্বের কারণে সবাই ছিলেন আলাদা। এতে পারিবারিক বিরোধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সন্তানরা ছিল বাবা-মার আশ্রয়হীন। এসব রায়ে মাধ্যমে পারিবারিক দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হওয়ায় তারা অনেক খুশি।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নির্যাতিত নারীদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করায় বিচারপ্রার্থী জনগণ দ্রুততার সঙ্গে ন্যায় বিচার পাচ্ছেন এবং মামলা জট কমছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

সুনামগঞ্জ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খায়রুল কবীর রুমেন বলেন, এর আগে উক্ত আদালতের বিচারক এমন অনেক রায় দিয়েছেন। যার ফলে আদালতের প্রতি মানুষের আরও বেশি আস্থা ফিরে আসবে। আদালতে বর্তমানে মামলা জট রয়েছে। এ ধরনের রায়ের মাধ্যমে মামলা জটও কমে আসবে।

সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে অনেকগুলো পরিবার সংসার টিকে গেল আর সন্তানরা পাবে তাদের নিরাপদ পারিবারিক আশ্রয়। এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।

সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এর আগেও কয়েক দফায় অনেকগুলো মামলা আপস নিষ্পত্তি করে দিয়ে সংসারে জোড়া লাগান। 

শেয়ার করুন