মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুই হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়েছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, আটকে পড়া মানুষের জীবন রক্ষায় পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গত শুক্রবার রাতের এই ভূমিকম্পের বেশ কিছু পরাঘাতে ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়। বিশেষ করে পাহাড়ি গ্রামগুলো যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কারণে সেখানে তল্লাশি অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেক মানুষ টানা দ্বিতীয় রাতের মতো খোলা জায়গায় রাত কাটায়। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এই ভূমিকম্পে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া নারী, শিশুসহ কমপক্ষে ২ হাজার ৫৯ জন আহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, পর্যটন নগরী মারাকেশে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এতে রাজধানী রাবাত এবং কাসাব্লাঙ্কাসহ আরও অনেক জায়গায় কম্পন অনুভূত হয়। এমনকি প্রতিবেশী আলজেরিয়াতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এই ভূমিকম্প মরক্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হেনেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। খবরে আরও বলা হয়, ভূমিকম্পে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বাদশ শতকের একটি মসজিদ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকা মারাকেশের মেদিনার অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল থেকে ৪৩ মাইল দূরবর্তী এবং মরক্কোর চতুর্থ বৃহত্তম শহর মারাকেশের ঐতিহাসিক বেশ কিছু ভবন গুঁড়িয়ে গেছে।
মারাকেশ থেকে ২৫ মাইল দক্ষিণে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল থেকে নিকটবর্তী গ্রাম মৌলে ব্রাহিহের বাসিন্দারা বলছিলেন, কীভাবে খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ বের করে আনছেন তাঁরা।
মৌলে ব্রাহিহের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী ইয়াসিন নউমঘার বলেন, ‘আমরা ঘরবাড়ি হারিয়েছি। আমরা স্বজন হারিয়েছি। দুই দিন ধরে বাইরে রাত কাটাচ্ছি আমরা।’ সরকারি সামান্য ত্রাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি ও খাদ্যসংকট প্রকট। সরকার তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসুক, কেবল এটুকু চান তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে অনুযায়ী, মরক্কোয় ১৯৬০ সালের ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর শুক্রবারে দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প এটি।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী তাঁবু টাঙানো হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হওয়া একটি বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, এই বাড়িটি তাঁর ছিল। এখন কিছুই নেই। প্রতিবেশীরা এখনো (গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা) ধ্বংসস্তূপের নিচে আছে বলে ধারণা তাঁর।
ভূমিকম্পের পরপরই গত শনিবার মরক্কো সরকার উদ্ধার ও তল্লাশি কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি সুপেয় পানি সরবরাহ এবং খাদ্য, তাঁবু ও কম্বল দিতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছিল।
তবে মরক্কোর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হলেই সাহায্যে এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্স। নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, মরক্কোকে ত্রাণসাহায্য দিতে প্রস্তুত আছে ফ্রান্স; যদি মরক্কো মনে করে, তবে তা কার্যকর হবে।
মরক্কোকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানা দেশ তুরস্কও। ওই ভূমিকম্পে দেশটির ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত তুরস্কের সাহায্যকারী দল মরক্কোর উদ্দেশে রওনা দেয়নি।
এদিকে মরক্কোকে সাহায্য করতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ পাওয়ার কথা গতকাল জানিয়েছে স্পেন। মরক্কোয় অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হবে বলেও দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ ছাড়া মরক্কোর উদ্দেশে রওনা করেছে কাতারের উদ্ধারকারী দল।