সরকারি ঋণ গ্রহণে সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ সরকারি ঋণ সংগ্রহ করতে পারবে না।
সরকারের পক্ষে সংগৃহীত ঋণের হিসাবায়ন, যথাসময়ে পরিশোধসূচি অনুযায়ী ঋণের আসল ও সুদ বা মুনাফা পরিশোধ, ঋণের পুনঃতফসিলীকরণসহ যাবতীয় ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ঋণ অফিস দায়ী থাকবে। সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ মিডল অফিস হিসেবে গণ্য হবে এবং সব সরকারি ঋণ অফিসের সাথে সমন্বয় করবে। সামগ্রিক সরকারি ঋণের হিসাব সংরক্ষণকারী অফিসের দায়িত্ব পালন করবে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। সম্প্রতি ‘সরকারি ঋণ আইন ২০২২’-এর প্রকাশিত গেজেটে এসব কথা বলা হয়েছে।
আইনটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পাবলিক ডেট অ্যাক্ট ১৯৪৪’ রহিতপূর্বক তা সময়োপযোগী করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা কয়েছে। আইনে সরকারি ঋণ অফিস হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে এবং এদের কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সরকারের ঋণনীতি, ঋণ পরিকল্পনা ও ঋণ কৌশলপত্র অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করতে পারবে এবং ঋণ সংগ্রহ, ঋণ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে ও ওই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ, ঋণ পরিশোধ, হিসাব সংরক্ষণ, বৈদেশিক ঋণের বাজেট এবং ঋণ প্রোফাইলিংসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে; এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ একই সাথে ফ্রন্ট অফিস ও ব্যাক অফিস হিসেবে গণ্য হবে।
আইনে ‘ফ্রন্ট অফিস’-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত ও নির্দিষ্টকৃত কার্যালয়, যেখানে প্রত্যক্ষভাবে সরকারি ঋণ গ্রহণে ঋণ দাতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, আলাপ-আলোচনা, চুক্তি ইত্যাদি কাজ সম্পাদিত হবে।
আইনে ‘ব্যাক অফিস’-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক ঘোষিত ও নির্দিষ্টকৃত কার্যালয়, যেখানে সরকারি ঋণের হিসাবায়ন, সামঞ্জস্য বিধান, পরিশোধ ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ঋণ বাজেট অনুযায়ী সরকারের পক্ষে সরকারি সিকিউরিটি ইস্যুপূর্বক স্থানীয় বা বৈদেশিক মুদ্রায় অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক উৎস থেকে সরকারি ঋণ বা বিনিয়োগ গ্রহণ করতে পারবে এবং এ ধরনের সরকারি ঋণ বা বিনিয়োগের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে; এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একই সাথে ফ্রন্ট অফিস ও ব্যাক অফিস হিসেবে গণ্য হবে।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর-এর কার্যপরিধির বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর সরকার কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন, আদেশ, পরিপত্র অনুসরণপূর্বক সরকারের ঋণ বাজেট অনুযায়ী সরকারের পক্ষে বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমের আওতায় জনগণের বিনিয়োগ গ্রহণ করবে এবং এ ধরনের সরকারি ঋণের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে; এ ক্ষেত্রে জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর একই সাথে ফ্রন্ট অফিস ও ব্যাক অফিস হিসেবে গণ্য হবে।
আইনে মিডল অফিস হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ-এর কার্যপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ঋণনীতি ও ঋণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র প্রস্তুত, ঋণের ঝুঁকি নিরূপণ, অভ্যন্তরীণ ঋণ বাজেট প্রস্তুত ও এসব উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ, সার্বভৌম বন্ড ইস্যু, সার্বভৌম বন্ড বা সার্বভৌম সুকুক বা সুকুক-এর প্রসপেক্টাস অনুমোদন, রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদান, গ্যারান্টি ও অন্যান্য উৎস থেকে উদ্ভূত সরকারের প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়ন ও পরিবীক্ষণ ও কেন্দ্রীয় ঋণ ডাটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে; এ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ মিডল অফিস হিসেবে গণ্য হবে এবং সব সরকারি ঋণ অফিসের সাথে সমন্বয় সাধন করবে।
আইনে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়-এর কার্যপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সব সরকারি ঋণ অফিসের সহায়তায় সরকারি ঋণের হিসাব সংরক্ষণ, পরিশোধসূচি অনুযায়ী ঋণের আসল ও সুদ বা মুনাফা পরিশোধের হিসাবায়ন, সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ঋণ অফিসের সাথে ঋণ তথ্যের সামঞ্জস্য বিধান ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদন করবে; এ ক্ষেত্রে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সামগ্রিক সরকারি ঋণের হিসাব সংরক্ষণকারী অফিস হিসেবে গণ্য হবে।