দেশে ডলারের চার ধরনের রেটে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বাজারভিত্তিক রেটে করতে নানা লুকোচুরি করছে ব্যাংকগুলো। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপও ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে না। নেপথ্যে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে বাজারভিত্তিক ডলারের রেট নির্ধারণ না করা। বাজারভিত্তিক রেট না করায় রমরমা হয়ে উঠেছে হুন্ডি ব্যবসা। হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় ডলার দুষ্প্রাপ্য হচ্ছে। অনেক ব্যাংক ডলার না থাকায় আমদানি ব্যয় শোধ করতে পারছে না। যার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পণ্যমূল্যের ওপর পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানিকারকের জন্য ডলারের রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা, রেমিট্যান্সের জন্য ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। এটাকে বাজারভিত্তিকের কাছাকাছি দাবি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি কিছু ব্যাংক মৌখিক নির্দেশনায় ভিন্ন ভিন্ন দরে ডলারের লেনদেন করছে, যা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে, বাজারভিত্তিক ডলার লেনদেনে রেট নির্ধারণ থাকবে না।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, ডলারের সংকট রয়েছে। এর সঙ্গে হুন্ডি জড়িত কি না, সেই ব্যাখ্যা জানা নেই। তবে রপ্তানি আয় হ্রাস ও রেমিট্যান্স বৈধপথে আসা কমার ফলে ডলার দুষ্প্রাপ্য হচ্ছে। এতে এলসির বিল পরিশোধ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার একটা প্রভাব বাজারে পড়েছে।
এদিকে খোলাবাজারে ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এটা খোলাবাজারের জন্য ঘোষিত দরের থেকে অনেক বেশি। যদিও ঘোষিত দর হিসাবে ১১১ থেকে ১১২ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বাজারে মিলছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চড়া দামে ডলার কিনে চাহিদা মেটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নীতিমালা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ কোনোভাবেই কাজ করছে না। ডলার-সংকট নিয়ন্ত্রণে মূল বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। ডলারের দর বাজারভিত্তিক না করায় আজ হুন্ডি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। তত দিনে রিজার্ভে ধস নেমেছে। আইএমএফের হিসাবে ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। তবে নিট রিজার্ভ ১৭ বিলিয়নের নিচে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক ডলারের থাক্কা দেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। টাকার মান কমায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। ডলারের মজুত বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে সামনে আরও খেসারত দিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ডলারের সংকটা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ডলারের বাজারের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।