যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোয় শুরু হতে যাচ্ছে ৩০তম এপেক বা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্মেলন। এই সম্মেলনের ফাঁকে জোটের দুই শীর্ষ দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান দ্বয় এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। নানা কারণেই এই বৈঠকটি বহুল আলোচিত এবং বহুল কাঙ্ক্ষিত। বিশেষ করে দুই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, দুই দেশের মধ্যকার প্রযুক্তি ও বাণিজ্য খাতে ঘোষিত-অঘোষিত লড়াইয়ের কারণে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যকার বৈঠকে কী কী বিষয় আলোচিত হতে পারে তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো মুখ খোলেনি দেশ দুটি। তবে উভয় দেশের সংবাদমাধ্যমই বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে একাধিক আলোচ্য বিষয় বের করে এনেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই নেতার মধ্যে অনেকগুলো বিষয়ই আলোচনা হবে কিন্তু তাঁরf কোনো বড় ঐকমত্যে পৌঁছাবেন এমন আশা করা হচ্ছে না। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এপি বলেছে, দুই দেশের মধ্যকার যে দ্বৈরথ সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা, সংঘাতের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা এবং সব সময়ই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখার মতো বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাবে।
চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ঝু ফেঙ চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, ‘কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্রকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন এবং কীভাবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলোকে সরানো যায়—এমন অনেক বিষয় এই দুই নেতার আলোচনার টেবিলে থাকবে হয়তো।’ তাইওয়ান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নির্দেশ করে তিনি বলেন, তবে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে কেউ উসকানি দিয়ে যাবে তা যুক্তরাষ্ট্র সহ্য করবে না।
ঝু ফেঙের মতে, দুই নেতার মধ্যে আলোচনার আরও একটি বিষয় হতে পারে—দুই দেশের কৌশলগত উদ্দেশ্য কী তা মূল্যায়ন করা। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে অভিযুক্ত করতে পারে এবং এ কারণে চীনের কৌশলগত অভিপ্রায় সম্পর্কে ওয়াশিংটনের আরও বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ও বোঝাপড়া থাকা উচিত।
মার্কিন কর্মকর্তারf জানিয়েছেন, সি ও বাইডেন দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বন্ধ থাকা সরাসরি যোগাযোগ আবারও চালুর বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে পারেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চ্যানেল বন্ধ করে দেয় চীন।
দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় আশাবাদী মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল চার্লস কিউ ব্রাউন জুনিয়র। গত শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সামরিক যোগাযোগ বা সংলাপ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে চীনাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ভুল বোঝাবুঝি ঠেকাতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজির ডিরেক্টর দা ওয়েই রোববার গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, ‘সামরিক সংলাপ আবার শুরু করা খুবই সম্ভব। তবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে যে, সংলাপ আবার কবে শুরু হবে।’
দা ওয়েই বিশ্বাস করেন, অন্যান্য ক্ষেত্র—যেমন দুই দেশের সরাসরি সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ বৈঠক থেকে আরও বেশ কিছু ইতিবাচক ফলাফল আসবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি দুই দেশের মধ্যে আরও ফ্লাইট বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি করাসহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর চায়না-আমেরিকা স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো সৌরভ গুপ্ত গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, ‘সানফ্রান্সিসকো বৈঠক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে দুই দেশের বন্ধনকে আরও সুসংহত করা এবং ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যেকোনো উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা সংক্ষিপ্ত নোটিশে সমাধানের সক্ষমতা অর্জন করা।’