১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:২৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারে উপাচার্যদের ‘প্রমোদ ভ্রমণ’
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২২
কক্সবাজারে উপাচার্যদের ‘প্রমোদ ভ্রমণ’

সারা বছর কী কার্যক্রম পরিচালনা করবে-সেই সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।

এর নাম বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)। অধীনস্থ সংস্থা ও বিভাগের সঙ্গে সচিবালয়েই মন্ত্রণালয়গুলো এই চুক্তি করে থাকে। কিন্তু কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে ইউজিসি অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।

বুধবার সকালে এটি হোটেল রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টে শুরু হয়েছে। সেখানে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আরও ৩ থেকে ৫ জন যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ গেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। ঢাকায় যে অনুষ্ঠান করা যেত, তা এভাবে আয়োজন করা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

একে তারা উপাচার্যদের ‘প্রমোদ ভ্রমণ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটের (করোনার প্রভাব ও ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন নীতি অনুসরণ করছেন।

ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান জানান, এপিএ বাস্তবায়নের অংশ হিসাবেই এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এই চুক্তি অনুষ্ঠানের জন্য ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। যার মধ্যে এই অনুষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। তাছাড়া এটি প্রথমবারই নয়। এর আগে কুমিল্লায়ও একইভাবে এপিএ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে মূল অনুষ্ঠান শুরু হলেও অনেকে সোমবারই সেখানে পৌঁছে গেছেন। উপাচার্যদের সঙ্গে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং ফোকাল পয়েন্টের (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা) এতে যোগ দেওয়ার কথা। এছাড়া ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সদস্য ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তবে কেউ কেউ পরিবারের সদস্য আবার গাড়ি ও ড্রাইভার নিয়েও গেছেন। জানা গেছে, দুই দিনব্যাপী হোটেলে থাকা, আপ্যায়ন, পরিবহণ, অংশগ্রহণকারীদের সম্মানি সব কিছুর ব্যয় ইউজিসি বহন করছে। শুধু ভ্রমণভাতা (টিএ) এবং দৈনন্দিন ভাতা (ডিএ) সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ব্যয় হবে। ফলে খরচ শেষ পর্যন্ত ১৫ লাখের মধ্যে থাকছে না বলেই মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

অবশ্য ইউজিসির সচিব বলেন, উপাচার্য, রেজিস্ট্রার আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বাইরে কেউ এলে বা নির্ধারিত দিনের বেশি অবস্থান করলে সেই খরচ সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, যেই অনুষ্ঠান ঢাকায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাদা বা একসঙ্গে ইউজিসির মিলনায়তনে কিংবা একটি হল ভাড়া করেই সম্পন্ন করা যেত সেটা এত দূরে কেন? এপিএ’র মূল উদ্দেশ্য শুদ্ধাচার ও সততার চর্চা। এভাবে অর্থ বরাদ্দ করে ব্যয় করা হলে তা এপিএর মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন-এপিএ’র জন্য এ খাতে এভাবে বরাদ্দ রাখাটা নৈতিক ও যৌক্তিক কিনা। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয় আর ইউজিসি হবে সমাজে নৈতিকতা ও সততা চর্চার দৃষ্টান্ত। তাদের কর্ম থেকে সমাজ ও ব্যক্তি উৎসাহিত হবে। সেখানে এভাবে নামকাওয়াস্তে অনুষ্ঠানের নামে প্রমোদ ভ্রমণ করে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ ব্যয় করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটি সরকারপ্রধানের নির্দেশনারও পরিপন্থি। কেননা জাতীয় অর্থ সাশ্রয়ে মিতব্যয়িতার নির্দেশনা আছে। সেখানে এভাবে আয়োজন অপ্রয়োজনীয় ও কাম্য নয়।

জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক আমন্ত্রিত আছেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের আরও কয়েক কর্মকর্তা যোগ দেন।

জানা গেছে, এই এপিএ বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে ইউজিসি গত মাসে অস্ট্রেলিয়াতেও আরেকটি ভ্রমণ আয়োজন করেছিল। ইউজিসির এপিএ হলেও তাতে শিক্ষা সচিবের পিএসসহ ডজনখানেক কর্মকর্তা তালিকাভুক্ত ছিলেন। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকার সব দপ্তর ও সংস্থানে ব্যয় সংকোচনের নীতি নিয়েছে। যে কারণে শেষপর্যায়ে এসে ওই ভ্রমণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আরও জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও এ ধরনের ভ্রমণের জন্য বরাদ্দ আছে। বিশেষ করে মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কর্মকর্তাদের বছরে একাধিকবার ‘সঞ্জীবনী’ কর্মসূচির নামে কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণে যেতে দেখা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এপিএ বাস্তবায়নের নামে জনগণের অর্থের এ কোন অপচয়?

উল্লেখ্য, ইউজিসির এ ধরনের বিলাসী ভ্রমণ এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর বান্দরবান জেলার ভেনাস রিসোর্টে আয়োজন করা হয়েছিল। এতে তখন প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন