মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক কালা হোসেন। ২০১২ সালের ১৩ জুন থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন মর্গের ফ্রিজে আছেন লাশ হয়ে। কালা হোসেনের লাশ নিতে কেউ আসেননি। সাড়ে ১১ বছর মর্গে পড়ে রয়েছে সেটি। কালা হোসেনের মতো আরও তিন রোহিঙ্গার লাশ দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত আছে চমেক মর্গে। বছরের পর বছর মরচুয়ারি কুলারের জায়গা দখল করে রাখা এসব লাশের শেষ গন্তব্য কোথায়, তা এখন পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ওই চার রোহিঙ্গা ব্যক্তি বিভিন্ন মামলার আসামি থাকা অবস্থায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হলে পুলিশ লাশ মর্গে রাখে। চারটি লাশ সংরক্ষণে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে দাবি করে এই টাকা রাজস্ব হিসাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) একটি চিঠিও দিয়েছে চমেক কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের লাশের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল করার দায়িত্বে থাকা পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘এসব লাশ নিয়ে আমরা বিপাকে আছি। বছরের পর বছর ফ্রিজে সংরক্ষণ করার ফি হিসাবে ১৩ কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে। টাকা পরিশোধের অনুরোধ করে চমেক কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছে। লাশগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা কক্সবাজার পুলিশকে চিঠি দিয়েছি।’
পুলিশ ও চমেক সূত্রে জানা যায়, কালা হোসেন ছাড়াও অন্য যে তিনজন রোহিঙ্গার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে তাঁরা হলেন তৈয়ব, সাইথাং থো ও হাফেজ সিরাজ। এর মধ্যে তৈয়বের ২০১২ সালের ১৭ জুন, সাইথাং থোর ২০১৪ সালের ২৩ মে এবং হাফেজ সিরাজের লাশ ২০১৭ সালের ১৪ মে থেকে মর্গের ফ্রিজে রয়েছে।
দীর্ঘদিন এভাবে রাখায় লাশগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চমেকের অধ্যক্ষ সাহেনা আকতার। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর চার রোহিঙ্গা নাগরিকের লাশ এভাবে পড়ে থাকায় সংরক্ষণে সরকারের বিপুল পরিমাণে টাকা নষ্ট হচ্ছে। পুলিশকে বলেছি; কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি। লাশগুলো নিয়ে ঝামেলায় আছি।’
চমেক কর্তৃপক্ষ লাশ সরাতে তাড়া দিলেও পুলিশ চিন্তায় আছে সংরক্ষণের খরচ নিয়ে। চমেক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গত বছরের ৯ নভেম্বর সিএমপির পাঁচলাইশ থানার ওসির কাছে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে লাশ সংরক্ষণ ফি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ১৩ জুন থেকে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কালা হোসেনের লাশ সংরক্ষণে ফি বকেয়া পড়েছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮০ হাজার, ২০১২ সালের ১৭ জুন থেকে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তৈয়বের লাশ রাখার ফি বকেয়া ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার, ২০১৪ সালের ২৩ মে থেকে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সাইথাং থোর লাশ সংরক্ষণে বকেয়া ৩ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার এবং ২০১৭ সালের ১৪ মে থেকে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত হাফেজ সিরাজের লাশ সংরক্ষণে বকেয়া ফি দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এরপর গত এক বছরের ফি যোগ করলে পুলিশের কাছে চমেকের মোট পাওনা ১৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।