বাজার নিয়ন্ত্রণে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার। গতকাল সোমবার চীন ও পাকিস্তান থেকে ২২৬ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে। তুরস্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকেও পেঁয়াজ আমদানির কথা ভাবছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার পেঁয়াজের বাজারে নজরদারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে গতকালও অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। হবিগঞ্জে গতকাল জেলা প্রশাসন জনপ্রতি এক কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশ দেয় ব্যবসায়ীদের। প্রশাসন ১২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজের দামও নির্ধারণ করে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে খুব দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। সাশ্রয়ী দামে ভোক্তাদের এই পেঁয়াজ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে তুরস্ক ও চীন থেকে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, দেশে পেঁয়াজের সংকট নেই। অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ৫২ হাজার টনের এলসি খোলা আছে। সেই পেঁয়াজ দেশে আনা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
চীন ও পাকিস্তান থেকে ২২৬ টন পেঁয়াজ
চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত রবি ও সোমবার দুই দিনে চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা ২২৬ টন পেঁয়াজ এসেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ খালাস হয়েছে মোট দুই হাজার ৬৪৫ টন।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ আসবে। তখন দাম কমে আসবে। তিনি বলেন, এখন ৯০ শতাংশ আড়তে পেঁয়াজ নেই।
পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে বিকল্প বাজার থেকে আমদানির আহবান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
হবিগঞ্জে পেঁয়াজের কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ক্রেতারা খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে একসঙ্গে এক কেজির বেশি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন না।
গতকাল হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার এলাকার চার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মেহেরপুরের বড়বাজারে পাইকারি আড়তগুলোতে ৮৫ টাকা ও খুচরা দোকানগুলোতে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজশাহীর গতকাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। ময়মনসিংহে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বিগত দিনের চেয়ে ১০ টাকা কমেছে। নীলফামারী শহরের বড়বাজারে প্রতি কেজি পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল বলেন, ‘সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজারে অভিযান চালিয়ে দুই পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
যশোরের শার্শা ও বেনাপোলে দেশি পেঁয়াজ গতকাল ১৪০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় টানানো তালিকার চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অভিযোগে সোমবার দুপুরে দেওয়া এক অভিযানে দুই ব্যবসায়ীকে ছয় হজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে কেজি ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্দরের সূত্রগুলো জানায়, গতকাল ও গত রবিবার বন্দরে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এর আগে গত শনিবার সর্বশেষ ২৬টি ভারতীয় ট্রাকে ৭৪৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়।
ফরিদপুরে গত তিন দিনের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং পুরনো পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গতকাল জেলা শহর ও আশপাশের বাজারগুলোতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি প্রকার ভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে।
খুলনায় অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি, মূল্য তালিকা ও ক্রয়-বিক্রয় রশিদ না থাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে নগরীর সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল পাইকারি কাঁচা বাজার ও নিউ মার্কেট খুচরা কাঁচা বাজারে এ অভিযান চালানো হয়।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কালের কণ্ঠ’র খুলনা অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম এবং হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বেনাপোল ও ভূরুঙ্গামারী প্রতিনিধি]