১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৬:৩১:১৭ অপরাহ্ন
অর্থ পাচার থামানোর তাগিদ এমপিদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৬-২০২৪
অর্থ পাচার থামানোর তাগিদ এমপিদের

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে যে কোনো উপায়ে অর্থ পাচার থামানোর তাগিদ দিয়েছেন সংসদ  সদস্যরা। বিদেশে অর্থ পাচার ও হুন্ডি থামাতে পারলে তিন মাসেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। একই সঙ্গে কালো টাকার (অপ্রদর্শিত আয়) পাশাপাশি ‘গ্রে মানি’ (নজরদারির বাইরে থাকা অর্থ) বৃদ্ধি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।


কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমরা ‘ব্ল্যাক মানি’ ও ‘হোয়াইট মানি’র কথা বলি, কিন্তু কখনো ‘গ্রে মানি’ অর্থাৎ ইনফর্মাল ইকোনমি যেটা আছে, যেটা করের আওতায়ও নেই, নজরদারির আওতায়ও নেই, যেটাকে কোনো অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেই ব্যাপারে কিছু বলছি না। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায়ও এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। অথচ, এই গ্রে মানি ব্ল্যাক মানি বা অপ্রদর্শিত আয়ের চেয়ে অনেক খারাপ। এটাকে সংকোচন করা না গেলে মানি লন্ডারিং কোনোভাবেই বন্ধ হবে না।


তিনি বলেন, বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি একজন করদাতা হিসেবে বছরে যখন ৩০ লাখ টাকার ওপরে আয় থাকে, আমাকে ৩০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। যিনি গত বছর আয়কর রিটার্নে টাকা প্রদর্শন করেননি, তিনি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই টাকা বৈধ করে নিচ্ছেন। এতে সঠিক করদাতারা কর দিতে অনিচ্ছা পোষণ করবেন।


 


যশোর-৬ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার টাকা পাচার, হুন্ডি বন্ধ করে দিতে পারলে তিন মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। হুন্ডির সঙ্গে যোগ হয়েছে অনলাইন জুয়া। কয়েক বছর আগে অভিযানে ঢাকার ক্যাসিনো বন্ধ হলেও অনলাইনে অসংখ্য বেটিং সাইট চালু হয়েছে। ঘাম ঝরিয়ে আয় করা টাকা এসব জুয়ার সাইটে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেক পরিবার ভেঙে যাওয়া, আত্মহত্যা, অর্থনীতির ভগ্নদশার জন্য এই অনলাইন জুয়া দায়ী। সব দেখেও আমরা চুপ থাকছি। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে। এগুলো বন্ধের ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা খাতেও সাফল্য অসামান্য। ২০০৬ সালে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে সেটা হয়েছে ৭৬.৮ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের হার ছিল ৫৪ শতাংশ, বর্তমানে তা ৯৮.২৫ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষার হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, বর্তমানে সেটা বেড়ে হয়েছে ১৭.৮৮ শতাংশ। এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান গবেষণা, প্রযুক্তির পাশাপাশি বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো গড়ায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর সিলেট বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। কৃষিমন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ বলেন, অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন তা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষি খাত অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। নিজেদের খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। কৃষকদের বাঁচাতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। না হলে বাংলাকে বাঁচানো যাবে না। ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কৃষিও রয়েছে। কৃষি খাত যান্ত্রিকীকরণের কারণে এবার বোরোতে এক ছটাক ধানও নষ্ট হয়নি। হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ময়েজ উদ্দিন শরীফ বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে আছে মানুষ। তবে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের চেয়ে এখানে মূল্যস্ফীতি কম। তুরস্ক-আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতি ২০-২২ শতাংশ। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আমার এলাকার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। সুনামগঞ্জ, সিলেট দুটি জেলাই সুরমা ও কুশিয়ারার পানিতে প্লাবিত হয়। সুরমা ও কুশিয়ারা খনন না করলে শুধু ত্রাণ দিয়ে বন্যা মোকাবিলা করা যাবে না। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুন নাহার বেগম (মহিলা আসন-৫০) বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগে অনেক অপরাধী দেশের ভিতরে টাকা পাঠিয়ে সাদা করতে পারবে। এখানে নৈতিকতার প্রশ্ন থেকে যায়। পর্যটনশিল্প সম্প্রসারণে সরকারের আরও পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল। এই খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৫২ কোটি টাকা, উল্টো শুল্ক বসানো হয়েছে ১৫ শতাংশ। এতে উদীয়মান খাতটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।


শেয়ার করুন